বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

এনজিওর ঋণের বেড়াজালে জড়িয়ে মাগুরায় অনেকেই বাড়িছাড়া

মোঃ ওয়ালিয়র রহমান, মাগুরা সংবাদদাতা : ব্যবসা করার জন্য বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে মাগুরাতে চলছে সুদের কারবার। ঋণের বেড়াজালে পড়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহাজনদের কাছ থেকে মাগুরা ইসলামপুর পাড়ার ফেলি বেগম নিজের অলংকার বন্ধক রেখে ৫০ হাজার টাকা চড়া সুদে ঋণ নেয় ২০০৩ সালের গোড়ার দিকে। ৬০ দিনের মধ্যে কিস্তি দিতে না পারলে ঐ টাকা সুদাসলে দ্বিগুণ হয়ে যায়। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য এনজিও আশা থেকে ২০ হাজার এবং স্বপ্নীল এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেয় ২০০৪ সালে। মহাজনদের টাকা পরিশোধ করলেও এনজিও আশা এবং স্বপ্নীলের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে স্বামী হারা ফেলি বেগম পালিয়ে যায়। আজোও ফেলি বেগমের সন্ধান মেলেনি বলে মাগুরার স্বপ্নীল ও আশা এনজিওর মাঠকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। ফেলি বেগমের বাড়ি ছিল গোপালগঞ্জ। তিনি ইসলামপুর পাড়া বস্তিতে ভাড়ার বাসায় থাকতেন। নিঃসন্তান এ মহিলা মাগুরা থাকাকালে নামে, বেনামে ৫টি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। অপর এক মহিলা শুকুরোন নেছার (৪৫) কাছেই আশা, ব্র্যাক, স্বপ্নীল, রোভা এ রকম ৫টি এনজিওর বই পাওয়া গেছে। একজন মহাজন হুমাউন কবির এর নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ সুদাসলে দ্বিগুণ হলে তিনি চালাকি করে মহাজনের ঋণ পরিশোধের জন্য গত বছরের মার্চ মাসে অন্য এক গৃহবধূর নামে মুদি ব্যবসার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। কিস্তি দেয়ার সুবিধার্থে তিনি এর পর খড়ির ব্যবসার কথা বলে ঋণ নেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিনি একজন গৃহিনী। তিনি কোন ব্যবসার সাথেই জড়িত নয়। অপর এক গৃহবধূ জোছনা খাতুন (৩৫) কাঠের ব্যবসার কথা বলে নিজ নামে স্বপ্নীল এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন ২০১৯ সালের নবেম্বর মাসে। সুদাসলে দ্বিগুণ টাকা পরিশোধের জন্য শক্তি ফাউন্ডেশান থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেন অন্য এক মহিলার নামে। হাস মুরগী পালনের কথা বলে জোছনা খাতুন মানব কল্যাণ সংস্থা থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন ২০১৯ সালের নবেম্বর মাসে। সুদাসলে দ্বিগুণ টাকা পরিশোধের জন্য শক্তি ফাউন্ডেশান থেকে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেন অন্য এক মহিলার নামে। হাস মুরগী পালনের কথা বলে জোছনা খাতুন মানব কল্যাণ সংস্থা থেকে ২০ হাজার টাকা তুলেছেন গরু কেনার কারণ দেখিয়ে এস,এম,টি নামের একটি সংস্থা থেকেও ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। গরু কেনা হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মাগুরার নিখড়হাটা গ্রামের মীরজান বেগম (৪৭) আশা এনজিও থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন ছাগল কেনার উদ্দেশ্যে কিন্তু ছাগল কেনা হয়নি। কিস্তি পরিশোধের জন্য এ হতদরিদ্র মহিলা অপর এক গৃহবধূর নামে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন। কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে তিনি এনজিও মাঠকর্মীদের চোখ এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অবশেষে ঋণের কিস্তি ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগেই বাড়ি থেকে পালিয়েছেন ঐ মহিলা। একইভাবে বাড়ি থেকে পালিয়েছেন আশরাফুল আলম (৬০) ও তার স্ত্রী রুপবান খাতুন (৫২) দুই বছর আগে এনজিওর ঋণ ঘাড়ে নিয়ে পালিয়ে যায় মাগুরার মৌশা গ্রামের আংগুর ও কানুটিয়া গ্রামের আবু তালেব। ভবানীপুর গ্রামের ডিম ব্যবসায়ী মুকুল বিশ্বাস (২৫) আইপিএলের বাজী ধরে ব্যবসায়ের পুঁজি হারিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, বিনোদপুর ব্রীজের নীচে মহম্মদপুর ব্রীজের পাশে কামারখালী ব্রীজের পাশে আড়পাড়া বাজারের পাশে চিত্রা নদীর পাড়ে নিয়মিতভাবে চলত জুয়া খেলা। উঠতি বয়সের যুবকরা এতে জড়িত ছিল। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে জুয়া খেলা আপাতত: বন্ধ আছে। একাধিক এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে পৃথক পৃথকভাবে আলাপ করলে তারা জানান, মাগুরা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম লাভজনকভাবেই চলছে। দু-একজন সদস্য এরকম থাকতেই পারে। এতে তাদের কাজের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। তবে এখন থেকে তারা ঋণ গ্রহিতাদের ভোটার আইডি এবং চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র না দেখাতে পারলে ঋণ দিচ্ছেন না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ