বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল করে একনায়কতন্ত্র চালু করেছে সরকার’

ফাইল ফটো

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করে দেশে একনায়কতন্ত্র চালু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আজ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো তারা (সরকার) দখল করে নিয়েছে এবং সেটা দখল করেছে শুধু বন্দুক-পিস্তলের জোরে টানা ক্ষমতায় থাকার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। আজ বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রবিহীন, ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে আমাদের বের হতে হবে। এদের সরাতে হবে, জনগণকে মুক্তি দিতে হবে এবং সেই মুক্তি দিতে হলে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে হবে। জনগণকে জাগিয়ে তুলতে হলে বিএনপিকে দেশের সব মানুষকে, সব রাজনৈতিক শক্তিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ  করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আজকে এই স্মরণসভায় ব্যারিস্টার সালাম তালুকদারকে অনুসরণ করে আমরা সবাই সক্রিয় হবো। তার শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমরা অবশ্যই জয়ী হবো।’

তিনি বলেন, ‘কোনোদিন আমরা কল্পনাই করতে পারিনি যে এই নির্বাচন কমিশন দেশে এমন ভয়াবহ ধরনের নির্বাচন করবে। তিন তিনটি নির্বাচনই তারা একই ধরনের নির্বাচন করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা একটা হাইব্রিড সরকার। তারা নির্বাচনকে ব্যবহার করবে তাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য এবং করছেও তাই। তারা পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, আদালতসহ সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে বলেছে, আমরা তো নির্বাচিত সরকার।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। হাজারো নেতাকর্মী গুম হয়েছে, খুন হয়েছে। ইলিয়াস আলীর মতো নেতা, চৌধুরী আলমের মতো নেতা, লাকসামের পারভেজের মতো নেতা গুম হয়ে গেছেন। তাদের কোনো খোঁজ নেই। আমরা এই পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিতি ছিলাম না। আমরা গুম শব্দটা জানতামই না। আজকে আমরা আমাদের নেতাদেরকে গুম হয়ে যেতে দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি খুন করছে, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড চলছে এবং মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আজকে সত্যিকার অর্থে প্রত্যেকটি মানুষ এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।’

খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। এটা তো একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। যে নেত্রী স্বাধীনতার পতাকা, গণতন্ত্রের পতাকাকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন, জনগণ তার পেছনে ছুটেছে— সেই নেত্রীকে তারা আটক করে রেখেছে। এর একটি মাত্র কারণ— তিনি যদি বাইরে থাকেন, তাহলে এই জনগণকে আটকে রাখা যাবে না। সেজন্য তারা আজকে তাকে আটকে রেখেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরকম একটি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমরা লড়াই করছি। আমরা কখনো সরে যাইনি। আমরা এর মধ্যে সংগ্রাম করছি, আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কাজ করছি। আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছি, বিভক্ত হতে দিইনি।’

‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে আমরা সক্ষম হবো, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব দুঃখ হয়, কষ্ট হয়, যখন আমরা দেখি— যেসব দেশ একসময় গণতন্ত্রের কথা বলত, তারাও এখন অন্য দেশের গণতন্ত্রকে হরণ করে নিচ্ছে। আমাদের খুব দুঃখ হয় যখন আমরা দেখি একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী সেসব দেশে গেলে অপমানিত হতে হয়, লাঞ্ছিত হতে হয়।’

৯/১১ (ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলা)-এর পর পৃথিবীর রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগে সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ছিল, সেই সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে পুঁজিবাদী বিশ্ব। এরপর তারা লড়াই করেছে, যুদ্ধ করেছে একে অন্যকে পরাভূত করার চেষ্টা করেছে। সেই সময়টার রাজনীতি ছিল ভিন্ন সময় এবং তারই ফলশ্রুতিতে তখন একটা লিবারেল ডেমোক্রেসি, গণতন্ত্রের বিজয় সূচনা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন সেই রাষ্ট্রগুলোর কাছে গেলে তারা বলবে, এখন গণতন্ত্র পাওয়া যাবে না। এখন নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।’

‘আজকের পৃথিবী সেই তথাকথিত সিকিউরিটির নামে, তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কথা বলে সারাপৃথিবীতে যেসব ছোট রাষ্ট্র রয়েছে, বিশেষ করে ইসলামি রাষ্ট্র রয়েছে, যে দেশগুলোতে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, সেই দেশগুলোতে চেপে বসেছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আমরা এখানে রাজনীতি করছি,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আব্দুস সালাম তালুকদারের অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সালাম তালুকদার ছিলেন অনুকরণীয় একজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, মেধার অধিকারী এবং জ্ঞানের অধিকারী। দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এটা নিঃসন্দেহে একটা বিরল কৃতিত্ব। তার নেতৃত্বের গুণাবলী ছিল, যারা তার সঙ্গে কাজ করেছেন তার নিশ্চিয়ই বলবেন ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম কোনো সাধারণ রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি অত্যন্ত ধীবুদ্ধি সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সেই ব্যক্তিত্বের সামনে গিয়ে রাজনীতি করা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সিরাজুল হক, নিলোফার চৌধুরী মনি, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, প্রয়াত আব্দুস সালাম তালুকদারের সহধর্মিনী মাহমুদা সালাম, তার মেয়ে সালিমা বেগম, স্বামী মাহমুদুল হাসান, ভাতিজী সাদিয়া হক, স্মৃতি সংসদের সুজাত আলী, শামসুজ্জামান মেহেদিসহ অন্যরা।-সারাবাংলা

ডিএস/এএইচ

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ