শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪
Online Edition

ইতিহাসের অজ্ঞতা গোলামী ডেকে আনতে পারে

ড. মো. নূরুল আমিন : ॥ দ্বিতীয় কিস্তি ॥
সুবে বাংলা ছিল পাঁচটি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত। এই বিভাগগুলো ছিল (১) প্রেসিডেন্সি বিভাগ : এর অধীনে ছিল ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, যশোর, খুলনা জেলা ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি শহর নিয়ে মোট ৬টি জেলা (২) বর্ধমান বিভাগ : এর অধীনে ছিল ৬টি জেলা যথাক্রমে হাওড়া, হুগলী, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান ও বীরভূম জেলা (৩) রাজশাহী বিভাগ : এর অধীনে ছিল ৮টি জেলা তথা রাজশাহী, পাবনা, মালদহ, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং (৪) ঢাকা বিভাগ : ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বরিশাল- এই চারটি জেলা নিয়ে এই বিভাগটি গঠিত ছিল। (৫) চট্টগ্রাম বিভাগ : এই বিভাগের অধীনে ছিল ৪টি জেলা এবং এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ত্রিপুরা জেলা।
বিভাগওয়ারি বিভাজনের বাইরেও অবিভক্ত বাংলা সন্নিহিত কিছু অঞ্চলে বাংলা ভাষাভাষী লোকের আধিক্য ছিল এবং এদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলমান। আসামের সিলেট জেলা, দেশীয় রাজ্য ত্রিপুরা ও কুচবিহার এবং বিহারের মানভূম ও সিংহভূম এলাকার বাসিন্দারা বাংলাভাষী ছিল।
প্রশাসনিক বিভক্তি ছাড়াও বেসরকারিভাবে অবিভক্ত বাংলা প্রদেশটি তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। এগুলো হচ্ছে পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা ও উত্তর বাংলা। প্রেসিডেন্সি ও বর্ধমান বিভাগ নিয়ে পশ্চিম বাংলা, রাজশাহী বিভাগ নিয়ে উত্তর বাংলা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ নিয়ে পূর্ব বাংলা গঠিত ছিল। এ প্রেক্ষিতে পূর্ব বাংলার সবকটি জেলা উত্তর বাংলার ৭টি জেলা এবং পশ্চিম বাংলার দু’টি জেলা তথা মোট ১৫টি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের অংশে পড়েছে। এর সাথে আসামের সিলেট জেলা যুক্ত হয়ে মোট ১৬টি জেলা নিয়ে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল তথা পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর এই অঞ্চলটিই এখন বাংলাদেশ নামে পরিচিত। তিন বাংলার পাঁচটি বিভাগের ২৮টি জেলার মধ্যে ১৫টি জেলা প্রথমে পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশের অংশ হবার একমাত্র মানদণ্ড ছিল ধর্মীয় বিশ্বাস। এই অঞ্চলের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ পাকিস্তান তথা মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। পশ্চিম বাংলার প্রেসিডেন্সি বিভাগের দু’টি জেলা যশোহর ও খুলনা ঐ সময়ে পাকিস্তানের ভাগে পড়ে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। এই বিভাগের খুলনা জেলা ছিল হিন্দু প্রধান এবং মুর্শিদাবাদ ছিল মুসলিম প্রধান। আবার মুর্শিদাবাদ শিল্পসমৃদ্ধও ছিল। কিন্তু তথাপিও হিন্দু প্রধান জেলাটি ভারতে এবং মুসলিম প্রধান জেলাটি পাকিস্তানের অংশ না হবার পেছনে হিন্দু নেতৃত্বের একটি কারসাজি কাজ করেছিল যা ভারত সরকারের প্রকাশিত ফারাক্কা দলিলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, ভারতের স্বার্থে ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার উৎসমুখ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ জেলা তাদের প্রয়োজন। এর বিনিময়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ খুলনা জেলাকে তারা পাকিস্তানকে দিতে চান। এই বিষয়ে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের সাথে ভারতীয় কংগ্রেসের সিনিয়র নেতারা ব্যাপক দরকষাকষি করেন এবং শেষ পর্যন্ত এই বিনিময়ে তারা রাজী হন। একইভাবে অবাঙালী অভিবাসীদের বাদ দিলে প্রেসিডেন্সি জেলা কলকাতাও ছিল মুসলিম প্রধান এবং এই শহরটিও ঐ সময়ে পাকিস্তানের অংশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা তা করতে দেননি। ঐ সময়ে মুর্শিদাবাদ ও কলকাতা পূর্ব পাকিস্তানের যদি অংশ হতো তাহলে আজ এই অঞ্চলগুলো বাংলাদেশের অংশই থাকতো।
বলা নিষ্প্রয়োজন যে, ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে বৃটিশরা অবিভক্ত ভারতে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান ভূখণ্ডের সীমানা চিহ্নিত করেছিলেন। আবার দেশীয় রাজ্যগুলোর বেলায় বলা ছিল যে, তারা নবসৃষ্ট দু’টি দেশ পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের যে কোন একটিতে যোগদান করতে পারবে। বাংলার পূর্বাঞ্চলের জনগণের শতকরা ৯০ ভাগ আগেই সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়ে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছিলেন। আসাম ও পাঞ্জাবে গণভোট হবার কথা ছিল। এই পর্যায়ে একটি কথা বলে রাখা দরকার যে, বাংলা এবং পাঞ্জাব বিভক্ত হতে চায়নি। কেননা উভয় প্রদেশই ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় কংগ্রেস এতে রাজী হয়নি। তারা শুরু থেকেই-এর বিরোধিতা করেছে। পণ্ডিত নেহেরু ও মোহনলাল করমচাঁদ গান্ধী উভয়ে এর কট্টর বিরোধী ছিলেন। তাদের ভাষায়,“Division of India must mean division of Bengal and Punjab”  অর্থাৎ ভারতকে বিভক্ত করতে হলে অবশ্যই বাংলা ও পাঞ্জাবকেও বিভক্ত করতে হবে। তাদের স্বপ্ন ছিল বাংলা ও পাঞ্জাব বিভক্ত হলেই কেবলমাত্র স্বল্পকালের মধ্যে ভারতকে পুনরেকত্রিকরণ করা সম্ভবপর হবে। ১৯৪৭ সালের ২৩ মে নেহেরু কর্তৃক ত্রিপুরার কংগ্রেস সভাপতি আশ্রাফ উদ্দিনকে লেখা একটি পত্রে এ কথাটিই পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। তার ভাষায়, “That is the way to have a united India soon after. If we have a united India straightway without such division that will of course be very welcome.” কিন্তু তাদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ায় তারা বাংলা ও পাঞ্জাবে ইতিহাসের নৃশংসতম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। গান্ধী এবং নেহেরুর অবদান এই দাঙ্গায় ছিল অপরিসীম যদিও গান্ধী পরবর্তীকালে মুসলমানদের প্রতি দরদ দেখাতে গিয়ে কপটতার আশ্রয় নিয়ে অহিংস নীতির অনুশীলনে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। নেহেরুর ভয় ছিল বাংলা যদি অখণ্ড থাকে তাহলে হিন্দুদের ওপর মুসলমানদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের ওপর তার প্রভাব পড়বে। এজন্য তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন যে, বাংলা যদি অখণ্ড থাকে তাহলে হিন্দু স্বার্থ বিপন্ন হবে। কাজেই তাদের কল্যাণের জন্য প্রয়োজনে বাংলার প্রতিটি গ্রাম এমনকি পাড়াকেও ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করতে হবে। অধুনালুপ্ত ছিটমহলগুলো তারই প্রমাণ বহন করছে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম ও এলাকাগুলো অবশ্যই ভারতের সাথে একীভূত হবে। হিন্দুদের অনুপ্রেরণায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এই বিভক্তিকে ত্বরান্বিত করেছে। পণ্ডিত নেহেরুর পরিকল্পনা অনুযায়ীই বাংলা বিভক্ত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের মালদহ, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং ভারতের অংশ হয়েছে এবং দিনাজপুর জেলাকে দু’ভাগ করে পশ্চিম দিনাজপুর নামক একটি অংশ ভারতকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও গ্রাম-পাড়াগুলোকেও ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করে শত শত ছিটমহল বের করে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
আবারো বলি, ১৯০৫ সালে মুসলমানদের কিছুটা উন্নতির কথা ভেবে এবং প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ববঙ্গ ও আসামকে যখন প্রদেশ করা হলো তখন হিন্দুরা প্রচণ্ডভাবে ক্ষেপে যায়। তারা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ মানি না আওয়াজ তুলে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের প্রবল বিরোধিতার মুখে বৃটিশ সরকার ১৯১১ সালে তা রদ করে দেয়। এই উপলক্ষে ইংল্যান্ডের রাজা ও ভারত সম্রাট দিল্লীতে এলে ডিএল রায় তাকে খোশ আমদেদ জানান এভাবে :

‘‘বাজুক শংখ উড়ুক নিশান
বিবিধ বর্ণে সাজি
ভারতের রাজা ভারতের রাণী
ভারতে এসেছে আজি...
রবীন্দ্রনাথ লিখলেন-
‘‘জনগণ মন অধিনায়ক
জয় হে ভারত ভাগ্য বিধাতা
তব শুভ নামে জাগে,
তব শুভ আশিস মাগে
গাহে তব জয় গাথা
জনগণ মঙ্গলদায়ক জয় হে
ভারত ভাগ্য বিধাতা।
মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের জন্য বৃটিশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটিকেই পরবর্তীকালে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। ইংরেজদের প্রতি হিন্দু মানসের আরো কিছু পরিচয় পাওয়া যায় ঈশ্বরগুপ্তের নিম্নোক্ত কবিতায় :

 (১) ‘‘তুমি মা কল্প তরু আমরা সব পোষা গরু
আমরা ভুষি পেলে খুশি হবো, ঘুষি খেলে বাঁচব না’’
 (২) ... জয় হোক বৃটিশের, বৃটিশের জয়
রাজ অনুগত যারা তাদের কি ভয়?
চিরকাল হয় যেন বৃটিশের জয়

বৃটিশের রাজলক্ষ্মী যেন স্থির রয়।
ভারতের প্রিয় পুত্র হিন্দু সমুদয়
মুক্ত মুখে বল সবে বৃটিশের জয়।
মুসলিম নির্যাতন এবং বৃটিশ বন্দনার বৈশিষ্ট্যকে সামনে রেখেই ভারতীয় হিন্দুরা সর্বদা অগ্রসর হয়েছে। ১৮৩২ সালে বাংলা একবার ভাগ হয়েছিল কিন্তু ‘হিন্দুরা তা নস্যাৎ করে দিয়েছিল। পুনরায় ১৮৭৪ সালে বাংলাকে ভাগ করে Chief commissionarate of Asam -এর সাথে যুক্ত করা হয়, কিন্তু এই বিভক্তিও টিকেনি। পূর্ব বাংলাকে তারা কোলকাতা বন্দর তথা পশ্চিমবঙ্গের পশ্চাৎভূমিতে পরিণত করেছিল। পরিকল্পিতভাবে তারা পূর্ব বাংলাকে কৃষি প্রধান ও পশ্চিম বাংলাকে শিল্পপ্রধান অঞ্চলে রূপান্তরের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সমুদ্র থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত প্রাকৃতিক বন্দর চট্টগ্রামকে তারা উপেক্ষা করে ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত কৃত্রিম বন্দর কলকাতাকে আন্তর্জাতিক বন্দরে পরিণত করেছিল। চট্টগ্রামে তারা কোনও অবকাঠামো গড়ে তুলতে দেয়নি। সেখানে জাহাজ ভেড়ার, পণ্য ওঠানামা, খালাস ও পরিবহনের কোনও সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। পাটসহ পূর্ব বাংলার কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্য রফতানির জন্য কোলকাতা বন্দরে নিয়ে যেতে হতো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর চট্টগ্রাম বন্দরের সামগ্রিক অবকাঠামো তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা বিরাজমান ছিল। তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, আজকে বাংলাদেশের ট্রানজিট-করিডোর ও বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারত ব্যাকুল হয়ে পড়লেও ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর তারা তাদের বন্দর ব্যবহার করতে আমাদের দেয়নি। পূর্ব বাংলায় শিল্প-কারখানা, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্টসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামো তৈরিতেও তাদের ছিল প্রবল আপত্তি।
বিশ্বের মোট পাট উৎপাদনের শতকরা ৮৫ ভাগ পূর্ব-বাংলায় উৎপাদিত হতো। কিন্তু এখানে দেশ বিভাগের আগে একটি পাটকলও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখানকার পাট দিয়ে হুগলীর তীরে গড়ে উঠেছিল ১০১টি পাটকল। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরে তখন ছিল কিছুসংখ্যক জুট বেইলিং প্রেস, যেখানে কোলকাতায় পাঠানোর জন্য পাটের গাঁইট তৈরি হতো। আমাদের বন্দর, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থাপনার শতকরা নববই ভাগেরও বেশি হচ্ছে দেশ বিভাগের ফল। এই বিভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে, হিন্দু মুসলমানের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সামনে রেখে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ তথা ভারতবর্ষ পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানে বিভক্ত না হলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হতো না এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশ না হলে এই অঞ্চলের মুসলমানরা গোলামীই করতো, যেমন তারা আগে করেছে। মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের অমুসলিম রাজা ভারতে যোগ দেয়ায় এই রাজ্যটির মুসলমানরা হিন্দু আধিপত্য থেকে মুক্ত হতে পারেনি, সেখানে যুদ্ধ হয়েছে। একটি অংশ পাকিস্তান দখল করেছে, অপরাংশ ভারতের দখলে আছে। অধিকৃত কাশ্মীরে বিগত ৬৯ বছর ধরে ভারত বিরোধী সংগ্রাম চলছে। তারা স্বাধীন হতে পারেনি। ১৯৪৭ সালে এই অঞ্চল যদি পাকিস্তানের অংশ না হতো তা হলে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রশ্ন উঠতো না। আর আমরা যারা আদালতের জজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পত্র-পত্রিকার সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বুদ্ধিজীবী, নায়ক-নায়িকা, এমপি-মন্ত্রী-মিনিস্টার হিসেবে গর্ব করছি এবং চাষি পরিবার থেকে উঠে এসে সমাজের উঁচু তলায় আসন গেড়ে বসেছি তাদের অবস্থান থাকতো প্রতিবেশী সমাজের পায়ের তলায়। কথাটা একটু কঠিন হলেও আমি না বলে পারছি না এই কারণে যে, আমি আমার পূর্ব পুরুষদের অবস্থা দেখেছি। হিন্দু আধিপত্য এবং তাদের বর্ণভেদ প্রথা মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে পরিণাম ডেকে এনেছিল তার ভয়াবহতার সামান্যতম অংশ দেখে আমি শিহরিত হয়ে উঠেছি, আজকে আমাদের ঘরে ঘরে শিক্ষিত লোকের ছড়াছড়ি। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও পয়সাওয়ালা লোকেরা গিজগিজ করছে।
দেশ ভাগের আগে হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার অবস্থা কি ছিল, তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, জজ-ব্যারিস্টার কতজন ছিলেন এবং সে তুলনায় বর্তমানে তাদের তুলনামূলক অবস্থা কি তা যারা জানেন না তাদেরকে আমি অন্ধ বলি। এই অন্ধ এবং দেশদ্রোহীদের পক্ষে ইতিহাসের সত্যকে উপেক্ষা করা সম্ভব অন্য কারুর নয়। আর যদি প্রাধান্য পায় তাহলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ থাকতে পারে না। (সমাপ্ত)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ