রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

এখনো সময় আছে দ্রুত পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন

রাজধানী পল্লবীসহ দেশব্যাপী বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে পুলিশের গুলীবর্ষণ ও হামলার প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি (ঢাকা মহানগ উত্তর-দক্ষিণ) আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: দ্রুত পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন। সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সেই তত্ত্বাবধায়কের অধীনে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের নতুন সরকার নির্বাচিত করবে। অন্যথায় পরিণতি হবে ভয়াবহ। গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে দলের কর্মসূচিতে পুলিশি গুলীবর্ষণ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

বিএনপির মহাসচিব বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে বোমা মারছে। সরকার নীরব। তারা রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আসলে সরকারের কোমর সোজা নাই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত না, সেজন্য আজ বুক ফুলিয়ে মিয়ানমারের বোমাবর্ষণের প্রতিবাদ করতে পারছে না। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের (বিএনপির) কাজ হচ্ছে জনগণকে সাথে নিয়ে ভয়াবহ দানবীয় শক্তি যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। 

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের নতুন সরকার নির্বাচিত করবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছেন, হামলা করছেন। এগুলো করবেন না। এগুলো করে বাংলাদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।  দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদেরকে পদত্যাগ করানো হবে। 

এসময় সকল রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রকামী মানুষকে আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আসুন আমরা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা আমাদের সকল অর্জনকে ধ্বংস করেছে, বাংলাদেশ আত্মাকে বিসর্জন দিয়েছে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।

সরকার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলন শুরু হয়েছে আমাদের সাধারণ মানুষের চাল-ডাল-তেলের দাম কমানোর জন্য, আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য, আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে ভোটের অধিকারকে রক্ষার করার জন্য তখন এই আওয়ামী লীগের সরকার তারা তাদের পেটুয়া বাহিনী...নামিয়ে দিয়েছে। ওরা হত্যা করেছে ভোলা ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে ও নারায়গঞ্জে যুবদলের নেতাকে। শনিবার আপনারা দেখেছেন আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানকে আহত করেছে, আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালকে আঘাত করেছে, আমাদের নারী নেত্রীদেরও তারা রেহাই দেয়নি, তাদেরও তারা আঘাত করেছে। আজকে এই সরকার একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে তখন তারা সন্ত্রাস, হত্যা, সভা পন্ড এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। যাতে করে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে সোজা হয়, সহজ হয়। 

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আজকে বিভিন্ন জায়গায় আপনারা(ক্ষমতাসীনরা) সন্ত্রাস করছেন এবং সভা-সমাবেশ করতে অনুমতি দিচ্ছেন না। আমি বলতে চাই, এসব করবেন না। এভাবে বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না, নিপীড়ন-দমন করে বাংলাদেশের মানুষ কখনো দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদেরকে পরাজিত করা হবে। রাজধানীতে চলমান কর্মসূচির সময়ে দলের গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব

মির্জা ফখরুল বলেন, ওরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এই কথা বললে তাদের গায়ে আগুন লাগে, তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। বলে আমরা তো এই সমস্তের মধ্যে নাই। কিছু দিন আগে গুমের কথা বলা হলো তারা বললো গুম হয় না। এটা নাকী তারা নিজেরা নিজেরা গুম হয়ে যায় অথবা ভূমধ্যসাগরে পানির নিচে গিয়ে ডুবে মরে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ঢাকায় এসে বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, এখানে গুম হচ্ছে, এখানে মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মশিউর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আজিজুল বারী হেলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ মহানগরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের দলীয় কর্মসূচিতে হামলার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু ও তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা হয়েছে। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। একটা অপ্রস্তুত অবস্থায় আমাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। আমরা এই মুহূর্তে মারামারির জন্য প্রস্তুত নই। 

মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের কর্মসূচি ছিলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে। সেখানে আমাদের গায়ে সরাসরি হাত তোলা হচ্ছে। এরইমধ্যে তিনজনকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে, এই দেশের মানুষ কথা বলতে পারবে না। সরকারের অকর্ম আর বেশি দিন সহ্য করা যাবে না। মানুষ ফুঁসে উঠেছে, রাজপথে নামতে চাই। বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদেরকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অনুমতি চাইলে বলে, এখানে মিটিং করা যাবে, ওখানে করা যাবে না। তাহলে আমরা কি গণভবন কিংবা বঙ্গভবনে মিছিল করবো?

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলার পর আমাদের তিন জন মারা গেলো। প্রতিটি মিছিল মিটিংয়ে হামলা হলো। এর অর্থ হলো আপনি যা বলেন তা করেন না। তার উল্টোটা করেন। বর্তমান ‘ছাগল’ মার্কা নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন হবে না মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা নিরপেক্ষ সরকার আদায় করে নির্বাচনে অংশ নেবো। সোমবার রাজধানীর সুবজবাগে বিএনপির সমাবেশ আছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, এটা আমার এলাকা। সেখানে মিটিং করার জন্য অনুমতি চেয়েছি। অনুমতি না দিলেও মিটিং হবে। অনুমতি দিলে এক জায়গায় হবে। অনুমতি না দিলে একশ’ জায়গা হবে। কোনো কিছু ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকে নিতে হবে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে সমস্ত কাপুরুষ নারীর ওপর হামলা করে, তারা পার পেয়ে যাবে এটা ভাবার কোনো উপায় নেই। প্রতিটি হামলার জবাব আমরা দেব। সেই প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে রিজভী বলেন, যারা হামলা চালিয়েছে, সেই কাপুরুষদের প্রত্যেকটা ভিডিও আর ছবি আমাদের কাছে আছে। আপনারা কেউ রেহাই পাবেন না।

পরে নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এভারকেয়ার হাসপাতালে দলের আহত ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও তার সহধর্মিণীকে দেখতে যান। তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ