সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বে পরিবারতন্ত্রের অবসান

আশিকুল হামিদ

বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা বৃহৎ প্রতিবেশি বলে শুধু নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি থাকার কারণেও ভারতের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে অনেকেরই যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এই আগ্রহ আসলে সকল বাংলাদেশিরই থাকা দরকার। দরকার দেশটির রাজনৈতিক গতিধারা সম্পর্কে লক্ষ্য রাখাও। কেন দরকারÑ তার কারণ সম্পর্কে এখন আর সম্ভবত বিস্তারিত বলার দরকার পড়ে না। 

এভাবে শুরু করার কারণ সৃষ্টি হয়েছে ভারতের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি পদে গান্ধী পরিবারের বাইরের একজনÑ মল্লিকার্জুন খাড়গে নির্বাচিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। মিস্টার খাড়গে অবশ্য পারিবারিক যোগ্যতায় বা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হননি। তাকে কেরালা রাজ্যের লোকসভা সদস্য শশী থারুরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সভাপতি পদের নির্বাচনে মিস্টার থারুর পেয়েছেন এক হাজার ৭২ ভোট। অন্যদিকে মিস্টার খাড়গে সাত হাজার ৮৯৭ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। 

কংগ্রেস পার্টির সভাপতি পদে মিস্টার খাড়গের এই নির্বাচন অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। প্রধান কারণ হলো, পদটির জন্য এবারই প্রথম নির্বাচন করতে হয়েছে। আর এর কারণ, সর্বশেষ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া নেতা রাহুল গান্ধী ছিলেন ভারতের সবচেয়ে আলোচিত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতিÑ আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী ও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ছেলে।  ভারতের রাজনীতিতে ‘নতুন যুগের’ সূচনা করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৯ সালে রাহুল গান্ধীকে যখন কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়েছিল তখন সে জন্য কোনো নির্বাচন করতে হয়নি। কারণ, সভাপতি পদে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে কেউই প্রার্থী হননি। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর পক্ষে ৮৯টি মনোনয়নপত্র পেশ করা হয়েছিল। সেগুলোর প্রতিটিই ছিল নির্ভুল বা ত্রুটিবিহীন। সে কারণে রাহুল গান্ধীকে সভাপতি পদে নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর তাকে সভাপতির দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দলের সেদিন পর্যন্ত সভাপতি এবং রাহুল গান্ধীর মা সোনিয়া গান্ধী। ১৯৯৮ সাল থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে এসেছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে বহুবার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইলেও কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা সোনিয়াকে সরে দাঁড়াতে দেননি। দীর্ঘ ১৯ বছর পর রাহুলকে সামনে রেখে সোনিয়া গান্ধী সরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। নিজের ছেলে রাহুল গান্ধীকে পদটিতে বসিয়ে সভাপতির পদ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। 

সেই সাথে শুরু হয়েছিল পরিবারতন্ত্রের নতুন অধ্যায়ের। ১৩৫ বছরের ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দেশটির সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে কংগ্রেস। সবচেয়ে বেশি সময় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন থাকলেও ২০১৪ সালের পর থেকে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছে দলটি। সে বছর অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এমনকি প্রধান বিরোধী দলের অবস্থানও অর্জন করতে পারেনি। 

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে যখন ‘অনিচ্ছুক ও রাজনীতিতে অপরিপক্ব’ সোনিয়া গান্ধীকে সভাপতি বানানো হয়েছিল কংগ্রেস তখন মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডÑ এই চারটি ক্ষুদ্র ও কম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স- এনডিএ জোটের প্রবল দাপটের বিরুদ্ধে সোনিয়া গান্ধীকে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছিল। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সোনিয়ার নেতৃত্বে কংগ্রেস বিরাট বিজয় অর্জন করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। ২০০৯ সালের নির্বাচনেও কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত ইউনাইটেড পিপ্লস অ্যালায়েন্স বা ইউপিএ জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করেছিল। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় কংগ্রেস একাই জিতেছিল ২০৬টি আসনে। সেবার সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দাবি উঠেছিল জোরেশোরে। কিন্তু বিজেপির কঠোর বিরোধিতার পাশাপাশি উমা ভারতীর মতো কোনো কোনো নেতা-নেত্রীর শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করার হুমকির মুখে সোনিয়া গান্ধী পিছু হঠেছিলেন। সবশেষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলেছিলেন, তার ‘অন্তরাত্মা’ নাকি তাকে প্রধানমন্ত্রী হতে নিষেধ করেছে!

নিজে সরে গিয়ে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্তি দিয়েছিলেন ড. মনোমোহন সিংকে। উল্লেখ্য, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা হলেও কেবলই ‘বাঙালি’ হওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্তি পাওয়ার দৌড়ে হেরে গিয়েছিলেন পরবর্তীকালের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ওদিকে দ্বিতীয় দফায় কংগ্রেসের নেতৃত্বে ক্ষমতায় আগত ইউপিএ সরকার ক্রমাগত ব্যর্থতার নজীর স্থাপন করেছিল। একযোগে শুরু হয়েছিল কংগ্রেসের পতন। সেই সুযোগে দ্রুত সাফল্যের পথে এগিয়ে এসেছিল বিজেপি। এবার হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি একাই জিতেছিল ২৮২টি আসনে। অন্যদিকে কংগ্রেসের শোচনীয় ভরাডুবি ঘটেছিল। কংগ্রেস এমনকি প্রধান বিরোধী দলের অবস্থানেও যেতে পারেনি। কেন্দ্রে শুধু নয়, রাজ্যগুলোতেও কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে পারেনি। বরং আসামের মতো বেশ কিছু রাজ্যে দলটি ক্ষমতা হারিয়েছিল। মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছিল কংগ্রেস। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গুজরাটে দুই দফায় অনুষ্ঠিত রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনেও কংগ্রেস ক্ষমতার কাছাকাছি যেতে পারেনি। অর্থাৎ কংগ্রেস ভারতের প্রধান একটি দলের অবস্থান খুইয়ে ফেলেছিল।  

দলের এমন এক শোচনীয় অবস্থায় রাহুল গান্ধীর মতো মাত্র ৪৭ বছর বয়সী একজন তরুণ নেতাকে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত করায় সঙ্গত কারণেই ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রতিক্রিয়ার একটি বড় কারণ ছিল, ভারতে তখনও প্রবল বেগে চলছিল ‘মোদি জোয়ার’। সে সময়ে বিজেপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কংগ্রেসের নেতৃত্বে এমন একজন নেতার প্রয়োজন ছিল, যার সঙ্গে কাজ করতে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের মতো প্রবীণ নেতারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। বিজেপি বিরোধী প্রধান জোট ইউপিএর নেতৃত্বও যেহেতু কংগ্রেসের হাতেই ছিল সেহেতু দলটির সভাপতি পদে জোটভুক্ত দলগুলো প্রবীণ কাউকেই আশা করেছিল। উল্লেখ্য, তার আগে পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধী ইউপিএর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার স্থলে রাহুল গান্ধী কতটা গ্রহণযোগ্য হবেন তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছিল তেমনি সংশয় ছিল রাহুলের যোগ্যতা নিয়েও। 

এ ধরনের প্রশ্ন ও সংশয় থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের সভাপতি পদে রাহুল গান্ধীর নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে ইতিহাসের আলোকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি ‘গান্ধী পরিবারের’ সদস্য এবং সভাপতির পদে তখন পর্যন্ত যে ১৫ জন বসেছিলেন তাদের মধ্যে ওই একটি পরিবার থেকেই এসেছিলেন পাঁচজন। রাহুল গান্ধী ছিলেন ‘গান্ধী পরিবারের’ ষষ্ঠ সদস্য।

উল্লেখ্য, ‘গান্ধী পরিবারের’ পক্ষে নেতৃত্বের সূচনা করেছিলেন পন্ডিত মতিলাল নেহরু। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর পিতা মতিলাল নেহরু ১৯১৯ থেকে ১৯২০ এবং ১৯২৮ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত দুই দফায় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা জওয়াহেরলাল নেহরু কয়েক দফায় কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন। নেহরুর কন্যা ও পরবর্তীকালে বিশ্বব্যাপি ব্যাপকভাবে আলোচিত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সাল থেকে এবং ইন্দিরার ছেলে রাজীব গান্ধী ১৯৮৪ সাল থেকে আট বছর করে কংগ্রেসের সভাপতি পদে ছিলেন। 

এরপর কিছুদিন কংগ্রেস ছিল নরসীমা রাও ও সীতারাম কেশরীদের অধীনে। এই দু’জনের পর ১৯৯৮ সালে আগত সোনিয়া গান্ধী এক নাগাড়ে ১৯ বছর সভাপতি পদে থেকে রেকর্ড তৈরি করেছেন। এ সময়ের মধ্যে নিজের ‘অন্তরাত্মার’ ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী না হলেও তিনি কংগ্রেসকে দু’বার কেন্দ্রের ক্ষমতায় এনেছিলেন। সেজন্যই ‘গান্ধী পরিবারের’ সদস্য হওয়ায় রাহুল গান্ধীকে নিয়ে কংগ্রেসের ভেতরে কোনো দ্বিধা বা বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়নি। বরং দলের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং তাকে কংগ্রেসের ‘ডার্লিং বয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস আবারও তার পুরনো অবস্থান ফিরিয়ে আনতে পারবে। অর্থাৎ আবারও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হবে কংগ্রেস। আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এবং বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবসহ আরো অনেকেও একই রকম আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। অন্যদিকে কংগ্রেসকে হারিয়ে ভারতের ক্ষমতায় আগত  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাহুল গান্ধীকে স্বাগত জানিয়ে এক টুইটার বার্তায় বলেছিলেন, তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর ‘ফলপ্রসূ কার্যকাল’ কামনা করছেন!

রাহুল গান্ধী অবশ্য মা সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম ভাষণেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এতদিন কংগ্রেস যা কিছু গড়েছে বিজেপি সে সবের কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি বরং সবকিছু ভেঙে ফেলেছে। শুধু তা-ই নয়, কংগ্রেস ভারতকে একুশ শতকে নিয়ে যেতে চায় আর বিজেপি নাকি চায় মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে। উদাহরণ দেয়ার জন্য রাহুল গান্ধী গো-হত্যা বন্ধের নামে মুসলিমসহ হাজার হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, বিজেপি সারাদেশে হিংসার আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকাংশে কবিতা আবৃতির ঢঙে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ওরা আগুন লাগায়, আমরা আগুন নেভাই। ওরা ভাঙে আর আমরা গড়ি। ওরা ক্রোধ দেখায় আর আমরা ভালোবাসি। এসবই নাকি বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের পার্থক্য।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গিয়েছিল, শুরুতেই রাহুল গান্ধীর এ ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলটির নেতারা বলেছিলেন, বিজেপি নয় বরং কংগ্রেসই অতীতের বিভিন্ন সময়ে দেশে আগুন লাগিয়েছে। রাহুল গান্ধী নাকি আবারও একই আগুন লাগানোর তথা সংঘাত ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিজেপি নেতারা কটাক্ষ করে বলেছিলেন, প্রজন্মের বদল হয়েছে সত্য কিন্তু কংগ্রেসের নীতি ও মানসিকতা বদলায়নি। অর্থাৎ প্রবীণদের স্থলে রাহুলের মতো তরুণ নেতা দলের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হলেও দল হিসেবে কংগ্রেস আগের মতোই ধ্বংসাত্মক অবস্থানেই থাকবে এবং দেশ ও জনগণের ক্ষতি করবে। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর আক্রমণাত্মক বক্তব্যে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল। তারা বলেছিলেন, কংগ্রেসের জন্য ‘ভদ্র’ ইমেজের সোনিয়া গান্ধীর স্থলে মারমুখি রাহুলেরই দরকার ছিল। একই কারণে কংগ্রেসের আবারও সাফল্যের দিকে যাত্রা শুরু হবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

রাহুল গান্ধীকে নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির পাশাপাশি সাধারণভাবে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট আলোড়ন উঠলেও একজন নেতা হিসেবে রাহুল কিন্তু তেমন সাফল্য দেখাতে পারেননি। সে সময় অনুষ্ঠিত দুটি লোকসভা নির্বাচনেই সোনিয়া গান্ধী অঘোষিতভাবে রাহুল গান্ধীকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি রাজ্যসভার নির্বাচনেও সোনিয়া গান্ধীর পরিবর্তে রাহুল গান্ধীকেই প্রধান নেতার ভ’মিকায় দেখা গেছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনেই তিনি কংগ্রেসের ভরাডুবি ঠেকাতে পারেননি। কংগ্রেস এমনকি প্রধান বিরোধী দলের অবস্থানও হারিয়েছে। এত ব্যর্থতা সত্ত্বেও রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের মতো সবচেয়ে প্রাচীন দলের সভাপতি হতে পেরেছিলেন একটি মাত্র কারণেÑ তিনি ‘গান্ধী পরিবারের’ সদস্য। এর মধ্য দিয়ে আরো একবার প্রমাণিত হয়েছিল, ন্যাশনাল কংগ্রেস অন্তত পরিবারতন্ত্রের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। 

এ প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীর প্রথম বক্তৃতার মূলকথাগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। কারণ, প্রধানমন্ত্রী মোদির এবং বিজেপি সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, মানুষকে এখন তার বিশ্বাসের জন্য পেটানো হয়, গরুর মতো খাবারের জন্য হত্যা করা হয়। মিস্টার মোদি মানুষের মুখ বন্ধ করার এবং মিথ্যা ধর্মীয় আবেগ দিয়ে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি করছেন। নষ্ট ও ধ্বংস করে দিচ্ছেন সম্প্রীতি। এটা একুশ শতকের রাজনীতি হতে পারে না। এসবের মাধ্যমে ভারতকে বরং মধ্যযুগে ঠেলে নেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

শুনতে মন্দ না হলেও রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে জনমত গঠন করতে পারেননি। তার নেতৃত্বে কংগ্রেস বিশেষ করে মুসলিমদের জীবন ও স্বার্থ রক্ষাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও ফিরিয়ে আনতে পারেনি। অথচ এসবই কংগ্রেসের সফলতার জন্য এসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। তখনও বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবারতন্ত্র সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। আসলেও পারেনি। এমনকি রাজিব ও সোনিয়া গান্ধীর কন্যা প্রিয়াংকা ভদ্র গান্ধীকে নিয়েও কথা যথেষ্টই হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসকে শেষ পর্যন্ত গান্ধী পরিবারের বাইরের একজনকেÑ মল্লিকার্জুন খাড়গেকে সভাপতি পদে নির্বাচিত করতে হয়েছে। এখন দেখা দরকার, কংগ্রেসের পক্ষে গান্ধী পরিবারের বাইরের কারো নেতৃত্বে সাফল্যের সঙ্গে কতদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ