সোমবার ১৩ মে ২০২৪
Online Edition

বাগমারায় অগ্নিকাণ্ডে শিক্ষিকা মা ও ছেলের মৃত্যু

বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা : রাজশাহীর বাগমারায় তিনতলা একটি ভবনে অগ্নিকা-ে ফরিদা (৪৫) নামে এক স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। এসময় ওই শিক্ষিকার দুই ছেলে দগ্ধ হয়ে তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে রক্ষা পেলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ দিন পর ছোট ছেলে মারা গেছে। ঈদের পর শুক্রবার ভোরে উপজেলার মাদারীগঞ্জ বাজারে শিক্ষিকার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে দুই ছেলে প্রথমে রামেক হাসপাতালে নেয়ার পর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করার এক দিন পর ছোট ছেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। অপর বড় ছেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, স্কুল শিক্ষিকার ফরিদা ইয়াসমিন তিনি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার শিবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং বাগমারার হাসনিপুর গ্রামের এজাজুল বাশার ওরফে স্বপনের স্ত্রী। স্বপন দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেকনিশিয়ান টেকনোলজি পদে চাকরি করেন। হাসনিপুরের পাশাপাশি মাদারীগঞ্জ বাজারে তিনতলা একটি ভবন ক্রয় করেন। ভবনটি এক সময় ছিল আশা সিনেমা হল। সিনেমা হলের তিনতলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন। কয়েকজন ভাড়াটেও ছিলেন। তবে ঈদের কারণে তারা গ্রামের বাড়িতে গেছেন। এ ছাড়া ভবনের অধিকাংশ স্থান বিভিন্ন পণ্যের গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অগ্নিকাণ্ডের সময় স্বপন বাসায় ছিলেন না। তিনি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাদের আহত দুই সন্তান রাশেদুল বাশার (২৫) ও রাফিউল বাশার (১৮) ঈদে বাড়িতে এসেছিল। ঈদের রাতেই তারা দুর্ঘটনার শিকার হন।

তাদের শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। রাশেদুল একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এবং রাফিউল উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন। ঘটনার দিনে রাতের খাবার খেয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনতলার বাসায় ঘুমিয়ে পড়েন স্কুল শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন। ভোরে বাসার দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় আগুন পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রতিবেশীরা টের পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তাদের চিৎকারে ও আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে আগুন ছড়িয়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না লোকজন। পরে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হলে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। ততক্ষণে বাড়িতে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বজনেরা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তিনতলার একটি কক্ষে স্কুল শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনের পোড়া লাশ পান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা আগুন নেভানোর সময় দেখতে পান, তিনতলা থেকে দুই ভাই রাশেদুল ও রাফিউল দগ্ধ অবস্থায় লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যান। দ্রুত তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর তারা বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তিনতলার একটি কক্ষে স্কুল শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনের পোড়া লাশ পান। এদিকে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করার এক দিন পর ছোট ছেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। অপর বড় ছেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বাগমারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, দুইতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেখানে রান্নার ব্যবস্থা ছিল। চুলার আগুন থেকেই মূলত আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এদিকে এমন দুর্ঘটনায় এলাকাবাসী হতবাক। মা ও ছেলেদের অবস্থা দেখে পিতা স্বপন বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ