শুক্রবার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩
Online Edition

খালেদা জিয়ার সার্বিক অবস্থার অবনতি

স্টাফ রিপোর্টার: এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা পরবর্তিতে দুপুরে ‘মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণ’ রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের একথা জানান। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থতার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে আছেন। ম্যাডামের লিভার, কিডনি, হার্ট, লাংগস্সহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে এক পর্যায়ে সিসিইউতে নিতে হয়। সিসিইউর চিকিৎসা পরবর্তিতে এখন উনি(খালেদা জিয়া) মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।

এদিকে গত রোববার দিবাগত রাত আড়াইটায় খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। লিভার সমস্যার জন্য ফুসফুসে জমে যাওয়া পানি অপসারণ করার পরে খালেদা জিয়ার কিছুটা শ্বাসকষ্ট অনুভব হয়। শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পেতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিলো। খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড সদস্য অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মিডিয়া ইউংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গতকাল মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে।

হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শয্যার পাশে তার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান রয়েছেন। তার বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, স্ত্রী কানিজ ফাতেমাও সবসময় হাসপাতালে খোঁজ-খবর রাখছেন। লন্ডন থেকে তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান সার্বক্ষণিক ম্যাডামের চিকিৎসার সব কিছু তদারকি করছেন বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ।

সার্বিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার্থে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে দ্রুত বিদেশে পাঠাতে আবারো সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ডাক্তাররা যারা উনাকে (খালেদা জিয়া) দেখছেন, যারা তার ২৪ ঘন্টা মনিটরিং করছেন, তার সাথে যারা আছেন তারা বার বার করে বলছেন, যে তাদের চিকিৎসা এখন পর্যন্ত যতটুকু পেরেছেন, করেছেন। এরপরে যে এডভ্যান্স ট্রিটমেন্ট দরকার সেই এডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য বাংলাদেশে কোনো এডভান্স মেডিকেল সেন্টার নেই। এই কারণে তারা বার বার বলছেন যে, তাকে বাইরে বিদেশে এডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য পাঠানো অত্যন্ত জরুরি। আমি আজকে আপনাদের মাধ্যমে এককথাটা সমগ্র দেশবাসীকে এবং এই অমানবিক সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই, সবকিছু ভুলে এই গণতন্ত্রের নেত্রীকে যিনি গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, তার জীবন রক্ষার্থে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার করানো ব্যবস্থা করা হোক। অন্যথায় যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সমস্ত দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বিএনপি মহাসচিব।

গত ৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েকদিনে খালেদা জিয়ার লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, কিডনির কর্মক্ষমতা কিছু কমতে থাকায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে রাতে কেবিন থেকে রাতে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা এখন দুর্বল।

অধ্যাপক জাহিদ জানান, মেডিকেল বোর্ড সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অতিদ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপন করার জন্য সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেয়ার জরুরি। তাহলেই তিনি জীবনাশঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড তার রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।

খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার। মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী, অধ্যাপক নুরউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক একিউএম মহসিন, অধ্যাপক শামসুল আরেফিন, অধ্যাপক এজেড সালেহ, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম, অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক আহসানুল হক আমিন, অধ্যাপক আবু জাফর, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. আল মামুন, লন্ডন থেকে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমান, ডা. জিয়াউল হক, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ডা. হাবিবুর রহমান, অস্ট্রেলিয়া থেকে অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম। ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি, লিভার জটিলতায় ভুগছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ