ইয়া নবী সালাম আলাইকা ইয়া রাসূল সালাম আলাইকা
মিয়া হোসেন : মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) সকল মানুষের জন্যই সর্বোত্তম আদর্শ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, তোমাদের জন্য রাসূল (সা.)-এর আদর্শই সর্বোত্তম আদর্শ। সারা বিশ্বে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল যুগের সকল মানুষের সেরা মানুষ হযরত মুহাম্মদ (সা.)। সারা দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত উচ্চারিত নাম হযরত মুহাম্মদ (সা.)। রবিউল আউয়াল মাসের আগমনের সাথে সাথে সর্বত্র রাসূল (সা.) সম্পর্কে আলোচনার মাহফিল শুরু হয়। রাসূল (সা.)-এর আদর্শে নতুন করে পথ চলার শপথ গ্রহণ করে উম্মতরা। কিন্তু রবিউল আউয়াল মাস চলে গেলে শপথের কথা আমরা অনেকেই ভুলে যাই। ফলে আমরা ভুলে গেছি আমাদের আতœপরিচয়। তাই সারাবিশ্বে ইহুদি খৃস্টান চক্র মুসলিম নিধনে মেতে উঠেছে। দুনিয়াব্যাপী চলছে সীমাহীন শোষণ ও নিপীড়ন। সর্বত্র জ্বলছে অশান্তির আগুন। তাই নতুন করে শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলতে রাসূলের সা. আদর্শের বিকল্প নেই।
রাসূল (সা.) কেমন ছিলেন? এ বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রত্যেক মুসলমানের রয়েছে। বিভিন্ন কিতাবের বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সুন্দর আকৃতি বিশিষ্ট, সৌরভে সুবাসিত, গঠনে মধ্যম, দেহে সবল, মাথা ছিল বড় আকৃতির, দাড়ি ছিল ঘন, হস্ত ও পদ-দ্বয় ছিল মাংসল, উভয় কাঁধ ছিল বড়, চেহারায় ছিল রক্তিম ছাপ, চুল ছিল সরল, গন্ডদ্বয় কোমল। চলার সময় ঝুঁকে চলতেন, মনে হতো যেন উঁচু স্থান হতে নিচুতে অবতরণ করছেন। যদি কোন দিকে ফিরতেন, পূর্ণ ফিরতেন। মুখমন্ডলের ঘাম সুঘ্রাণের কারণে মনে হত সিক্ত তাজা মুক্তো। তাঁর উভয় কাঁধের মাঝখানে নবুয়্যতের মোহর ছিল-অর্থাৎ সুন্দর চুল ঘেরা গোশতের একটি বাড়তি অংশ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সুমহান, পূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতর চরিত্রে সুসজ্জিত, সবদিকে অতুলনীয়। মহান আল্লাহ রাসূলের (সা.) চরিত্র সম্পর্কে বলেন- এবং নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সূরা ক্বলম : ৪)।
মহান আল্লাহ তায়ালা রাসূলের (সা.) জীবনাদর্শ সম্পর্কে বলেন, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাঝে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সূরা আহযাব: ২১)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাপেক্ষা তাকওয়া অবলম্বনকারী ছিলেন। তিনি গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ সম্পর্কে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি অবগত এবং আল্লাহকে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি। স¡য়ং সাহাবায়ে কেরাম একথার সমর্থনে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) বলেন, আমরা গণনা করে দেখতাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মজলিসে একশত বার বলতেন, হে আমার রব, তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার তাওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি তাওবা কবুলকারী, দয়াশীল।
নবী আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স¡ীয় রবের অনুগত ছিলেন। তিনি মেনে চলতেন তাঁর আদেশ-নিষেধ। আমলে সালেহ বেশি করতেন। আয়েশা (রা.) নবী আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন, নবী আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল ছিল ধারাবাহিক। তিনি যা পারতেন তোমাদের কেউ কি তা পারবে? তিনি সিয়াম পালন করতেন-এমনকি আমরা বলতাম তিনি এর ধারাবাহিকতা আর পরিত্যাগ করবেন না। তিনি সিয়াম পালন বাদ দিতেন-এমনটি আমরা বলতাম তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না। তুমি তাঁকে রাত্রে সালাতরত অবস্থায় দেখতে না চাইলেও সালাতরত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পাবে। তুমি তাঁকে রাত্রে ঘুমন্তাবস্থায় দেখতে না চাইলেও ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পাবে। (তিরমিযী-৭০০)।
আউফ বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রজনীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম, তিনি মিসওয়াক করলেন, অতঃপর ওজু করলেন, এরপর দাঁড়িয়ে সালাত আরম্ভ করলেন, আমি ও তাঁর সাথে দাঁড়ালাম, তিনি সূরা বাকারা পড়া শুরু করলেন, দয়া সংবলিত আয়াত পড়ামাত্র থেমে প্রার্থনা করলেন। শাস্তির অর্থ সংবলিত আয়াত পড়ামাত্র থেমে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইলেন। অতপর দাঁড়ানোর পরিমাণ রুকুতে অবস্থান করলেন এবং পড়তে লাগলেন, মহা প্রতাপশালী, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, রাজত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী সত্তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।” অতঃপর সেজদা করলেন এবং অনুরূপ পড়লেন, এরপর আলে-ইমরান পড়লেন। অতঃপর একেকটি সূরা পড়তেন থেমে। (নাসাঈ-১১২০)।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতেন দাঁড়িয়ে আদায় করতেন এমনকি তাঁর উভয় পা ফেটে যেত। আমি বললাম- ইয়া রাসূলুল্লাহ ! কেন আপনি এমন করছেন অথচ আপনার পূর্বের ও পশ্চাতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে ? জওয়াবে তিনি বললেন, হে আয়েশা! আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? (আহমদ-২৩৭০০)।
রাসূল (সা.)-এর গোটা জিন্দেগী পরিচালিত হয় পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে। পবিত্র কুরআন অবিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জ দেয়, তারা যেন একত্রিত হয়ে কুরআনের একটি আয়াতের মতো আয়াত তৈরি করতে চেষ্টা করে। পৃথিবীর কোন মানব কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। দু’একজন কুরআনের আয়াত রচনা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বীকার করে, কুরআন পৃথিবীর কোন মানুষের তৈরি নয়, এটা রচনা করতে পারে একমাত্র স্রষ্টা। পৃথিবীতে পুজিঁবাদ, সমাজতন্ত্রসহ নানা মতবাদ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হলেও কোন তন্ত্রমন্ত্র মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। কয়েক যুগ ধরে বিভিন্ন দেশে নানা মতবাদ দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজকে বিশ্ববাসী আল কুরআনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কেননা একমাত্র চৌদ্দশত বছর পূর্বে মুহাম্মদ (সা.) কুরআনের আলোকে মদীনায় শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই মানবজাতির জন্য কুরআনই একমাত্র শান্তির ঠিকানা তা আজ পরীক্ষিত ও প্রমাণিত।