শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

চাপের মুখে নতি নয়

বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। অর্থাৎ যাকে যেখানে মানায়, সেখানেই সে সুন্দর। কোকিল কুহুতান করে, আর বাঘের আছে গর্জন। কোকিলের কুহুতান যতই মধুর হোক না কেন, বাঘের কণ্ঠে কিন্তু তা বেমানান। ওর কণ্ঠে গর্জনটাই সুন্দর। অর্থাৎ যথাবস্তুর যথা কাজ, যথাস্থানে যথাকাজ। মানান-বেমানান বিষয়টা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের ক্ষেত্রে এটা আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষ সৃষ্টির সেরা, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যেও রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণ। মানুষ যদি যথাক্ষেত্রে যথাকাজ না করে, তাহলে আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীতে বিপদের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। দুঃখের বিষয় হলো, যথাকাজে যথা আচরণে এখন মানুষের আগ্রহ কম। আর যারা শক্তিশালী, ক্ষমতাবান, উল্টো আচরণেই তারা আনন্দ পান। ন্যায়সঙ্গত আচরণের বদলে তারা দুর্বলদের চাপা দিতে, চোখ রাঙাতে ভালোবাসেন। শক্তিমানরা এই পৃথিবীতে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি চালু করে রেখেছেন নানা কৌশলে। প্রশ্ন জাগে, যারা শক্তিমান, যারা পরাশক্তিÑ পরস্পরের প্রতি তাদের আচরণ কেমন? ওই মহলের আচরণে ভারসাম্য রক্ষার একটা প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। কারণ তাদের কাছে মারণাস্ত্র বা পারমাণবিক অস্ত্রের কোনো অভাব নেই। একে অপরকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখেন ফলে কেউ কাউকে তেমন ঘাটাতে যায় না। এই বিষয়টাকে বলা হয় ‘ভীতির ভারসাম্য।’ কিন্তু দুর্বল দেশের জন্য রয়েছে তাদের ভিন্ন নীতি। চাপ, ভীতি, কৌশল সবই তারা প্রয়োগ করেন দুর্বলদের ওপর। চলমান ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধেও বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। 

ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বিবেকবান মানুষদের মজলুম ফিলিস্তিনীদের পাশে থাকার কথা। আর মুসলিমরা তাদের পাশে থাকাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও শক্তিমানরা চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে মালয়েশিয়া। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাতের প্রেক্ষাপটে হামাসের নিন্দা জানাতে পশ্চিমারা চাপ সৃষ্টি করছে মালয়েশিয়ার ওপর। রয়টার্সের প্রতিবেদনে রাজি নয় মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম ১৬ অক্টোবর পার্লামেন্টে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো বৈঠকে বার বার মালয়েশিয়াকে হামাসের নিন্দা জানাতে বলছিল। ‘আমি বলেছি, নীতিগতভাবে অনেক আগে থেকেই হামাসের সঙ্গে আমাদের একটি সম্পর্ক আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই আমরা তাদের চাপ তৈরির এই মনোভাবের সঙ্গে একমত নই। কারণ, গাজায় নির্বাচনে হামাস জয়ী হয়েছে এবং গাজাবাসী তাদের নেতৃত্ব বেছে নিয়েছে।’ উল্লেখ্য যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনীদের সোচ্চার সমর্থক এবং ইসরাইল ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে বিরাজমান বিরোধে দ্বিরাষ্ট্রীক সমাধানের পক্ষপাতি। এছাড়া ইসরাইলের সাথে তাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। হামাসের অনেক শীর্ষনেতা অতীতে মালয়েশিয়া সফর করেছেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকও করেছেন। গাজার ওপর ইসরাইলের অবরোধ অমান্য করে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ২০১৩ সালে হামাসের আমন্ত্রণে গাজায় গিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে মালয়েশিয়া একাত্ম হয়ে আছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে চাপ দেয়া হচ্ছে। দানবীয় এমন চাপের কাছে মানুষ কেন নতি স্বীকার করবে? মানুষ তো ন্যায়ের সমর্থনে উজ্জ্বল থাকবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ