শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

বোমা হামলার বিপরীতে অসার কথামালা

সংঘাত বন্ধের কথাই তো নেতারা বলে থাকেন। কিন্তু কোনো সম্মেলনে নেতারা যদি সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানানোর ব্যাপারে একমত হতে না পারেন, তখন তো প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক। নেতারা কি সংঘাত অব্যাহত রাখতে চনে? এমন প্রশ্নই জেগেছে কায়রো শান্তি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই শেষ হলো কায়রো শান্তি সম্মেলন। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি সহিংসতা বন্ধে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলো মিসর। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী আরব ও ইউরোপীয় নেতারা সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানানোর ব্যাপারে একমত হতে পারেননি। তবে শনিবারের (২১ অক্টোবর) এ সম্মেলন থেকে দুই সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন আরব নেতারা। কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সহিংসতা বন্ধে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন করে প্রচেষ্টা শুরুর দাবি জানিয়েছেন তারা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানাননি ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা। তবে তারা বলেছেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সেখানে ত্রাণ পৌঁছানোর বিয়ষটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রশ্ন হলো কে নিশ্চিত করবে? ইসরাইল কি জাতিসংঘের কথা মানে? যার কথা মানতো, সেই যুক্তরাষ্ট্র তো ইসরাইলি আগ্রাসন ও নির্বিচার হামলাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। পাঠাচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র, সেনাবাহিনী দিয়ে সাহায্য করার কথাও বলেছে। ফলে ইসরাইল পোড়ামাটি নীতি গ্রহণের সাহস পেয়েছে। আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণের পর জায়নবাদীরা বিমান হামলা চালিয়েছে হাসপাতালে। এতে নিহত হয়েছে শতশত নারী-পুরুষ ও শিশু। এমন বেআইনি ও বর্বর হামলার পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট  ইসরাইলের সাফাই গেয়ে বলেছেন, আমি মনে করি ইসরাইল নয়, এই হামলা চালিয়েছে অন্য কেউ। এরাই তো সভ্যতার শাসক, এদের সাথেই তো চলছেন ইউরোপের নেতারা। ফলে শান্তির পথ দেখাবেন তারা কেমন করে? কায়রো শান্তি সম্মেলনে বিষয়টি স্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করা গেছে।

কায়রো শান্তি সম্মেলনে সংঘাত দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। সম্মেলনে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান গাজায় সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাস করাতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ। মর্মান্তিক বিষয় হলো, সম্মেলনে আরব ও মুসলিম দেশগুলো অবিলম্বে ইসরাইলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও পশ্চিমা বলয়ের দেশগুলো মূলত গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ের কথা বলেছে। আর ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেন, এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল ‘একে অপরের কথা শোনা’। অর্থাৎ আপনারা কথারমালা গাঁথায় সময় ক্ষেপণ করবেন, আর ইসরাইল বোমার পর বোমার বিস্ফোরণে একটি জনপদকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে যাবে। এমন নৃশংস অপকর্মের আপনারা প্রতিবাদ করবেন না, নিন্দাও করবেন নাÑ কতই না চমৎকার আপনাদের বিবেচনাবোধ! আপনারা যুদ্ধবিরতি চাইবেন কেমন করে? আপনারা যে কৌশল গ্রহণ করেছেন, তাতে ত্রাণ গ্রহণ করার মত কোনো মানুষ গাজায় অবশিষ্ট থাকবে কী? ত্রাণগুলো না হয় নতুন কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পাঠিয়ে দেবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ