কবিতা
আগুন
নয়ন আহমেদ
নাকফুল-রঙা আগুন
কনিষ্ঠ আঙুলে শোভিত আগুন
জ্যোৎস্নাবিধৌত আগুন
নামিয়ে এনেছে সূর্যের দিন ।
পৃথিবীর আকাশ
ফিলিস্তিনের ভূগোল জুড়ে আঁকছে
পরিবেশ পরিচিতি।।
সধবা সান্ত¡না
জুড়ে দিয়েছে বিরতিহীন কোরাস।
শিশুদের রঙপেন্সিল থেকে
নিংড়ে নেওয়া উচ্ছল হাসি থেকে
বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া হৃৎপি- থেকে
নারীর সম্ভ্রম ও রক্ত থেকে
জন্ম হচ্ছে ভূগোল পরিচয়।
হেই, শিশুদের মতো মানচিত্র আঁকো!
আমিই ফিলিস্তিনি
এ কে আজাদ
ইসরায়েলের বোমা যেন আমার গায়ে ফোটে,
গাজার রক্ত আমার বুকে ফিনকি দিয়ে ওঠে।
রক্তমাখা শিশুর ছবি যখন দেখি চোখে,
বুকের ভেতর হাজার যুগের কষ্ট এসে ঢোকে।
হায়না-চোখে মানব-শিশু ক্ষুধার অন্ন বটে,
পশুর চোখে সবই সমান, যাহাই কিছু ঘটে!
রক্তে রাঙা মানুষ আমি, আমিই ফিলিস্তিনি,
স্বাধীনতার মন্ত্র মুখে রক্তে বিজয় কিনি।
স্বপ্নে দেখি মুক্ত আকাশ, স্বাধীন জন্মভূমি,
এসো পশুর নিপাত লিখি আমি-আমরা, তুমি।
মসজিদে আকসার আর্তনাদ
মুনীরুল ইসলাম
মসজিদে আকসা আমি অসহায় মজলুম
যুগে যুগে আমার ওপর চলছে রে জুলুম
আমায় করো মুক্ত-আজাদ
সালাত-জিকির করো আবাদ
কেমন করে ঘুমাও তুমি এমন অলস ঘুম।
আমি তোমার প্রথম কেবলা, ভূমি ফিলিস্তিন
ইহুদিদের বুলেটে লাল নামাজির আস্তিন
কত মুসলিম হচ্ছে শহীদ
স্বজনহারার নেইতো রে নিদ
আমার জমিন রক্তমাখা, ওই ছুঁড়িছে বোম
কেমন করে ঘুমাও তুমি এমন অলস ঘুম।
শত নবীর স্মৃতিমাখা আমার এই অঙ্গন
তাঁদের কবরেতে ঘেরা আমার এই প্রাঙ্গণ
প্রিয়নবীর মিরাজ রাতে
দেখা মেলে তাঁদের সাথে
আমার গায়ে আছে তাঁদের সিজদার চুম
কেমন করে ঘুমাও তুমি এমন অলস ঘুম।।
ঋতু রঙ
তাহমিনা চৌধুরী
আঙিনার ফুলগুলো আজ ঝিমিয়ে গেছে। ঋতু রঙে রাঙাতে পারছে না
আগের মতো আর পাপড়ি মেলছে না, নেই তার সতেজতা, নেই তেমন সুগন্ধ।
কাঁচের জানালা দিয়ে দিগন্ত বরাবর চোখ পড়লো
পাহাড় ছুঁয়ে ঘেঁষে আসা আমাদের ছোট্ট নদীর তীরে ফুটেছে কেয়া ফুল
কিন্তু এখন তো শরতের বিদায়ের ডাক, ক্ষণগণনা তো হেমন্তের
ডালে ডালে কচি পাতার আগমনে স্ফূরিত হবে এই হৃদয়
ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসবে, ডানা মেলে উড়বে, মধুর সুরে গাইবে
স্নিগ্ধ হাওয়ায় মাতিয়ে রাখবে, আমাদের এই ছোট্ট গাঁ
সন্ধ্যা হতেই বৃক্ষের ছায়ার সাথে দুলবে চাঁদের কিরণ,
জোছনা ছড়াবে আঙিনায়
সেই আধো আলো আধো জোছনায়, তাড়া করবে একটি স্বপ্নের দিকে
ঋতু রঙে রাঙাবো বলে, সেই কবে থেকে হাত বাড়িয়ে আছি।
আকসার সংগ্রামে
মুস্তফা মানিক
মন শুধু কাঁদে প্রভু আকসার প্রেমে
শোকে-দুখে নিঃশ্বাস যায় আজ থেমে
পাক ভুমি দিতে চুমি মনে বড় সাধ
হায়েনার তান্ডবে সব বরবাদ।
আকসার ইট-বালি কংকরে দেখি
ঝড়ে পড়ে রহমত বরকত- নেকি
ভেসে আসা সুমধর আজানের সুর
কলবের অমানিশা করে দেয় দূর।
আকসায় মজলুম করে অনুযোগ
দয়া করে দূর করো মহাদুর্যোগ
এনে দাও হে রহিম সোনালী সুদিন
আর যেনো না ভাসে রক্তে জমিন।
আকসার সংগ্রামে এনে দাও জয়
তুমি প্রভু রহমান বড় দয়াময়
জুলুমের অবসান টানো আজ ইতি
হাত তুলে মজলুম করে মিনতি।
যাপিত পরাজয়
সোলেমান রাসেল
জীবন ধারাপাতের চাষযোগ্য ভূমিতে
বিশ্বাসের চারা লাগিয়ে
বাম্পার ফলনের আশা বুনি
শিকড়সমেত ধ্যানগ্রস্ত চাষি হই
ঘামের ফোঁটায় ফোঁটায়
ফুলপরাগের সবুজ নিঃশ্বাসের
আনন্দস্রোতে গা ভাসাই
অবশেষে বানের জলের মতো থইথই করে
ফসল তুলতে না পারার আর্তনাদ।
অবিশ্বাসের শ্যাওলাতে
কারও বিপরীত বিশ্বাসের চাষযোগ্য ভূমি বুনি।
শরণার্থী শিবির থেকে বলছি
শাহীন সুলতানা
এরিয়েল, প্রাণভোমরা আমার! আমি তোমার প্রেয়সী ‘আমিরা’ বলছি;
শরণার্থী শিবির থেকে! তুমি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছ এরিক?
গাজার হৃৎপি- থেকে হাজার হাজার মানুষের পাঁজর খসে পড়ার
বিকট আওয়াজ কি তুমি শুনতে পাচ্ছ!
তুমি কি শুনতে পাচ্ছ- বুলেটে বিদ্ধ হওয়া নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের
প্রবল আর্তচিৎকার!
তুমি কি শুনতে পাচ্ছ- তোমাদের হাতে আমাদের সভ্যতা, স্বাধীনতা,
আমাদের ভিটেমাটি নির্দয়ভাবে গুঁড়ো হয়ে যাবার ইসরাফিলি আওয়াজ!
একবার বাইরে এসে দেখো... তোমাদের মুহুর্মুহু
বিমান হামলায় আমাদের অস্তিত্ব কিভাবে হিরোশিমা হয়ে গ্যাছে!
কতোটা নির্দয়ভাবে আমরা বাস্তুহারা হয়ে গ্যাছি!
আমার পিতামহ, আমার বাবা, চাচা, মা, বোন কতোটা
নিষ্ঠুরভাবে লাশের মিছিলে শামিল হয়ে গ্যাছে!
আমার যে ছোট্ট ভাইটি তোমাকে রোজ ফুল পৌঁছে
দিত আমার হয়ে; গতকাল সেও তোমাদের ড্রোন হামলায়
অতি নির্মমভাবে নিহত হয়েছে, দেখে যাও!
আমার চোখের সামনে এখন লাশের হিমালয়!
আমার স্বর্গীয় গ্রাম এখন মৃত্যুপুরী!
প্রত্যেকটি শরণার্থী শিবির, হাসপাতাল, ঘরবাড়ি,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি অ্যাম্বুলেন্সও লক্ষ কবরের গোরস্থান!
আমাদের স্বপ্নকে চুরমার করে- তোমরা বইয়ে
দিয়েছো রক্তের ফোরাত! বাড়ির প্রতিটি উঠান
বানিয়ে দিয়েছো গণকবরের আস্তানা।
ভূমি, আলো, বাতাস, জল থেকেও দাফন করে
দিয়েছো আমাদের তকদীর!
এই অবরুদ্ধ উপত্যকা এখন শোকের নগরী, নৃশংস
ধ্বংসযজ্ঞের বুর্জ খলিফা!
আমি মারা যাচ্ছি এরিয়েল!
আমার সমস্ত দেহের অসংখ্য স্পিøøন্টার যন্ত্রণায় দগ্ধ করে তুলছে।
ঈশ্বরকে বলেছি- মৃত্যুর পরের জীবনে তোমার সাথে যেন
আমার কক্ষনো দেখা না হয়!
কারণ, তুমি ইহুদী!
ফিলিস্তিন
হাসান মাহমুদ
অলিভের গাছে গাছে রক্তের ঢালি।
কুদুসে লেগেছে রক্তের ফোঁটা ফোঁটা দাগ :
এখানের রুটি ও জায়তুন ভিজে গেছে
শুহাদার রক্তে।
ও ইহুদার প্রেতাত্মা! এত নিষ্ঠুর হলে তোমরা কেমন করে?
তোমরা তো খেয়েছিলে খোদার মাননা ও সালওয়া!
কতটা অকৃতজ্ঞ হলে ভুলে গেছো খোদার নুসরত?
আজ অলিভের পাতায় পাতায় ফিলিস্তিনের কান্নায় খোদার আরশ ভারী।
যে হাত সেবায় নিয়োজিত সে হাত মিশিয়ে দিচ্ছো তোমরা ফসফরাস বোমায়।
এখানে নার্সের অ্যাপ্রোনও রক্তে মিশে
একাকার।
শিশুর মুখে বোমার জখম : বৃদ্ধের বুকে গুলী বলো
হে ইহুদার সন্তান, আর কত চাও শাহাদাতের নাজরানা?
আর কত চাও মানুষের ধিক?
দুশো কোটি মুসলিমের প্রেমের ধ্বনি অচিরেই শুনবে
লাব্বাঈক ইয়া আকসা লাব্বাঈক
লাব্বাইকা ইয়া আকসা লাব্বাঈক।