শনিবার ১৮ মে ২০২৪
Online Edition

ইসরাইল কি ভালো আছে

ইসরাইলের শাসকরা উন্মাদ হলেও হতে পারেন। কিন্তু বিশে^র বাকি নেতারা সুস্থ আছেন তো? সুস্থ থাকলে তারা ইসরাইলকে সুস্থ পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন কেন? ইসরাইলের রক্তপিপাসু নেতাদের ভ্রষ্টতা যে তাদেরও রক্তাক্ত করছে নানাভাবে, সেই সত্য এখন অনেকেই উপলব্ধি করতে সক্ষম নন। কারণ উপলব্ধির জন্য তো সুস্থতা প্রয়োজন, আর সুস্থতার জন্য প্রয়োজন নৈতিক পরিশুদ্ধি। তেমন ভুবনে তো আমরা এখন বাস করছি না। বর্তমান সভ্যতায় তো রাষ্ট্রসমূহের জন্য অর্থনীতি প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠেছে। কারণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ হলে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা যায়, ভূ-রাজনীতি করা যায়, আক্রমণও চালানো যায়। এসবই এখন পরাশক্তি হওয়ার গুণাবলী। এ বিষয়টিতো ইসরাইলী শাসকদের না বোঝার কথা নয়। তারপরও তারা ইসরাইলের অর্থনীতিকে এভাবে ক্ষতির মুখে ফেলে দিলেন কেন?

ইসরাইল গাজায় যে যুদ্ধ চালাচ্ছে, তা পঞ্চম মাসে গড়িয়েছে। যুদ্ধে গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল কি ভালো আছে? ইসরাইলের অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়েছে, বন্ধ হয়েছে ব্যবসাও। কারণ, এখন নতুন বিনিয়োগ পাচ্ছেন না তারা। আল-জাজিরা জানায়, গত অক্টোবর থেকে ইসরাইল সরকার প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার সংরক্ষিত সৈন্যকে বেতন দিয়ে যাচ্ছে। তাদের মোতায়েন করা হয়েছে গাজায়। এসব সেনাদের অনেকেই উচ্চ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন। তারা আর্থিক খাত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ওষুধশিল্প ও কৃষির মতো অর্থনীতির বিভিন্ন শাখায় কাজ করতেন। গত নবেম্বরে ব্যাংক অব ইসরাইল দেশটির অর্থনীতির ওপর যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে মোটাদাগের একটি হিসেব দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় এই ব্যাংকটি জানিয়েছিল, যুদ্ধের কারণে অর্থনীতির ওপর প্রভাবের আর্থিক মূল্য হবে ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মতো, যা ইসরাইলী মুদ্রায় ১৯ হাজার ৮০০ কোটি সেকেলের সমান। যুদ্ধে ইসরাইলের পর্যটন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোভিডের আগে দেশটির জিডিপির ২ দশমিক ৬ শতাংশ আসতো এই খাত থেকে। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটকরা দেশটিতে ভ্রমণ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে ইসরাইলজুড়ে রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট খালি দেখা যায়। ইসরাইলে ফ্লাইট বাতিল করেছে অধিকাংশ বিমান কোম্পানি। হামাসের ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ অভিযানের আগে প্রতি মাসে তিন লাখের বেশি পর্যটক ইসরাইল ভ্রমণে আসতেন। নবেম্বরে এই সংখ্যা ৩৯ হাজারে নেমে আসে। উল্লেখ্য যে, ইসরাইলী জডিপির ১৪ শতাংশ আসে নির্মাণ খাত থেকে। যুদ্ধের কারণে এ খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই অক্টোবর থেকে ইসরাইলজুড়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে ইসরাইলের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গাজা যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইসরাইলের অর্থনীতি। ইসরাইল হীরা, গাড়ি, পেট্রোল পণ্য ও সম্প্রচার যন্ত্রপাতি আমদানি করে থাকে। এসব পণ্য আসে লোহিত সাগরপথে। সেখানে হুথি বিদ্রোহীদের হামলা ইসরাইলের আমদানিকে বাধাগ্রস্ত করছে। অনেক পণ্য আফ্রিকা ঘুরে ইসরাইলে আসছে। এতে খরচ বেশি হচ্ছে। গাজা যুদ্ধ ইসরাইলী নাগরিকদের জীবনে বেশ  নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ শৃরু হওয়ার পর ২০ শতাংশের মতো ইসরাইলী নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের পারিবারিক আয় ‘বেশি’ বা ‘খুব বেশি’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক এক জরিপের পর ‘লাতেত’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ৪৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী মনে করেÑ এ বছরে আরও পরের দিকে কিংবা যুদ্ধের শেষে তাদের জন্য কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। ইসরাইলী নাগরিকদের এমন ধারণা খুবই সঙ্গত। কারণ যুদ্ধ কোনো সৃজনশীল কাজ নয়, বরং ধ্বংসের দানব। তাই কা-জ্ঞানসম্পন্ন নেতারা যুদ্ধ দীর্ঘয়িত করতে চায় না। কিন্তু ইসরাইলী শাসকদের মধ্যে তেমন শুভবুদ্ধির উদয় হবে কী?

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ