বুধবার ২২ মে ২০২৪
Online Edition

ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকের দাবি আদায়ের সূতিকাগার ----------------- আ.ন.ম শামসুল ইসলাম

গতকাল শুক্রবার শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে ভার্চুয়ালি আয়োজিত জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেছেন, শ্রমিকের পেশাগত অধিকার, মর্যাদা, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও দাবি আদায়ের সূতিকাগার হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন। ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমকে গতিশীল ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

গতকাল শুক্রবার শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে ভার্চুয়ালি আয়োজিত জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান বক্তা ছিলেন ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এতে আরও বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, গোলাম রব্বানী, লস্কর মো. তসলিম, কবির আহমেদ, মাস্টার শফিকুল আলম, মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, মনসুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আলমগীর হোসাইন, আব্দুস সালাম, মোঃ মুহিব্বুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান, দপ্তর সম্পাদক নুরুল আমিন  ও ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক সোহেল রানা মিঠু প্রমুখ।  

আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেন, ট্রেড ইউনিয়নের কাজ হলো শ্রমিকদের উন্নয়ন, মালিকদের সাথে শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে দরকষাকষি করা। শ্রমিকদের সাম্য, মানবিক মর্যাদা, স্বার্থ ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য যে সংগঠন গড়ে উঠে তাকে ট্র্ডে ইউনিয়ন বলে। দেশে বিপুল পরিমাণ মানুষ শ্রমজীবী। তাদের অধিকার রক্ষার জন্য যে পরিমাণ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা দরকার তা আজও হয়নি। শ্রমিকদের স্বার্থে প্রতিটি সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এবং ট্রেড ইউনিয়নে সাধারণ শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের জন্য সংগঠিত হওয়ার বিকল্প নেই। শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। একই সাথে শ্রমিকদের মনের কথা বুঝে, শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করতে পারে এমন দক্ষ নেতৃত্ব ট্রেড ইউনিয়নে নির্বাচিত করতে হবে। যারা শ্রমিকবান্ধব, শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য কাজ করে তাদেরকে নেতৃত্বে এগিয়ে আনতে হবে। যারা শ্রমিকরা সমস্যায় পড়লে দৌঁড়ে ছুটে আসে। শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায়। তাদের আপন করে নেয় এমনই নেতৃত্বই শ্রমিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ শ্রমজীবী। যাদের হাতে দেশের উৎপাদন ও সভ্যতা নির্মাণ হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি কাজে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শ্রমজীবী মানুষদের হাত, ঘাম, চিন্তা ও সহযোগিতা ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। 

তিনি বলেন, এত বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ছাড়া দেশে কোনো পরিবর্তন সাধিত হবে এটা ভাবা যায় না। বিশেষত আদর্শিক পরিবর্তনের জন্য শ্রমজীবী মানুষরা সবচেয়ে বড়ো অনুসঙ্গের ভূমিকা পালন করবে। এই জন্য শ্রম আন্দোলনকে মজবুত করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নে সদস্য বৃদ্ধির জন্য দাওয়াতি কাজ করতে হবে। সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কলকারখানায় সিবিএ নেতৃত্ব দিতে হবে। শ্রমিকদের ওপর চলা শোষণ-বঞ্চনার অবসান, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি, মজুরি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। হক ও ইনসাফের প্রশ্নে আপোষহীন থাকতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন আইন অনুযায়ী আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। 

সম্মেলনে নিম্ম লিখিত প্রস্তাবনা ও দাবি গৃহীত হয়েছে :

১. বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৩, ২৬ ও ২৭ ধারাসমূহ বাতিল করে আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে শ্রম আইন প্রণয়ন এবং শ্রম আইনকে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল শ্রমিকের অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায্যতা উপযোগী করে তৈরি করতে এই সম্মেলন জোর দাবি জানাচ্ছে।

২. এই সম্মেলন দাবি করছে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর করা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের হয়রানি বন্ধ এবং অবাধে ট্রেড ইউনিয়নের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

৩. এই সম্মেলন শিল্প-কলকারখানায় “কালাকানুন" টার্মিনেশন এ্যাক্ট বাতিল করে পূর্বের আইন বহাল করা, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, শিল্প-কলকারখানার মুনাফায় শ্রমিকদের অংশ প্রদান, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ফান্ডের যথাযথ ব্যবহার, রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।

৪. এই সম্মেলন চাল-ডাল ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং আসন্ন মাহে রমযানে দ্রব্যসামগ্রী সাধারণ শ্রমিক জনগোষ্ঠীর ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে। 

৫. এই সম্মেলন মনে করে, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই জ্বালানি তেলের দাম কমাতে এই সম্মেলন সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। 

৬. এই সম্মেলন বন্ধকৃত ২৫টি জুট মিলসহ সকল বন্ধকৃত কলকারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের যাবতীয় বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ এবং সকল বন্ধকৃত মিল, কলকারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। 

৭. এই সম্মেলন শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের নিরীখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো পুনঃনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছে এবং সর্বস্তরের শ্রমিকদের জন্য ট্রেডভিত্তিক সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করা ও তা সমাধান এবং অপ্রতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ সকল ক্ষেত্রে শ্রম আইনের সঠিক প্রয়োগ ও ইনসাফভিত্তিক শ্রমনীতি প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছে। 

৮. এই সম্মেলন মনে করে যে, শ্রমজীবী মানুষের প্রকৃত সমস্যার সমাধান ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া সম্ভব নয়। তাই ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রমজীবী মানুষসহ সকল স্তরের শ্রমিক জনতাকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পতাকাতলে শামিল হওয়ার জোর আহ্বান জানাচ্ছে। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ