শনিবার ১৮ মে ২০২৪
Online Edition

বলয়ের রাজনীতিতে ঘটে যায় পরিবর্তন

বর্তমান বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ কেমন? এর মূল্যায়ন অবশ্যই করা যায়। কিন্তু সঙ্গত মূল্যায়ন হয় কী? বলয়ের এই ভূ-রাজনীতিতে কী করে হবে? বলয়ের প্রভাব শুধু রাজনীতি বা অর্থনীতিতে নয়; লক্ষ্য করা যায় সমরাস্ত্র শিল্পে, গণমাধ্যমে, এমন কি শো-বিজেও। ফলে সঠিক তথ্য ও সত্য জানা এখন খুব সহজ বিষয় নয়, প্রোপাগান্ডার দৌরাত্ম্য এখন সর্বত্র। এ কারণেই হয়তো ইউক্রেন পরিস্থিতির নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা এখন তেমন লক্ষ্য করা যায় না। বলয়ের এই বিশ্ব ব্যবস্থায় যখন একদিকে থাকে আমেরিকা এবং অন্যদিকে রাশিয়া; তখন বিশে^র রাজনীতিক কিংবা পর্যবেক্ষকদের নৈতিকতার পারদ কি সঙ্গত জায়গায় অবস্থান করে? এমন অমানবিক ও অসুস্থ বাতাবরণে আক্রান্ত ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলো করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। আর চেয়ে চেয়ে সেই তামাশা উপভোগ করেন সুবিধাবাদী রাষ্ট্রনেতা, পর্যবেক্ষক ও মিডিয়াকর্তারা। বিষয়টি এখন বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করছেন ইউক্রেনের নাগরিকরা।

রাশিয়ার গোলা ও রকেট হামলায় ইউক্রেনের বিপুল অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটির অর্থনৈতিক কাঠামোও লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ইউক্রেনের অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বিশে^র অন্যতম শক্তিধর দেশ রাশিয়া তার সামরিক বাজেট দ্বিগুণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেন এখন কী করবে? যুদ্ধতো তাদের জন্য ভালো কোনো বার্তা দিচ্ছে না। এমন অবস্থায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন কেবল নিজের শর্তেই যুদ্ধ বন্ধে রাজি থাকার কথা বলছেন। আর ইউক্রেনের মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র, সামরিক সহায়তা প্রসঙ্গে বলছে, ‘যতদিন এটি লাগে’ এবং ‘যত দিন আমরা পারি’। এমন একটি দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে ইউক্রেনকে। পরাশক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে দুই বছর ধরে সাহসের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে ইউক্রেন। তবে তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চার কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশটি এখন বিধ্বস্ত, ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দেশটির লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর দেশটির ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হচ্ছে। রুশ হামলা বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাশিয়ার দখলে যাওয়া সব অঞ্চল ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকাও দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। আর মার্কিন সামরিক সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে ইউক্রেন বাহিনী। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতির পরামর্শক কমিটির সদস্য ও সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা স্টিফেন মেয়ার্স বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতার সঙ্গে না মেলায় তা কমানো হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গত সপ্তাহে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য সহায়তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ভূ-রাজনীতিতে এমন কথা বলতে হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে এবং স্বার্থের দোলাচলে বলয়ের রাজনীতিতে নানা পরিবর্তন ঘটে যায়। তখন অসহায়ের মত হাত কামড়াতে হয় দুর্বল দেশকে। শুধু আমেরিকা নয়, পাষান হৃদয়ের এমন পরিচয় দিতে পারে রাশিয়াসহ অন্য পরাশক্তিও। কোমল মানবিক হৃদয়ের জন্য তো প্রয়োজন হয়, স্রষ্টায় বিশ্বাস। এ বিষয়টির এখন বড়ই অভাব।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ