রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

রোজাদারদের ভোগান্তি

মাহে রমযানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্যমূল্য হ্রাস করা হলেও আমাদের দেশই এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কারণ, আমাদের দেশে রমযান মাস শুরু হওয়ার আগেই নিত্যপণ্যের বাজারে রীতিমত নৈরাজ্য শুরু হয়। আর পুরো রমযানই বাজার থাকে অস্থির ও অশান্ত। এবারও তার কোন অন্যথায় হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রোজা শুরুর আগে তেল, ডাল, চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু বাজারে এর তেমন কোন প্রতিফলন নেই বরং পরিস্থিতির ক্রমে অবনতিই হচ্ছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে যে যেভাবে পারছেন খেয়াল খুশিমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে বাজারে ইফতারে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি থাকায় স্বস্তি মিলছে না নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের। রমযানের শুরুতেই বেশিরভাগ পণ্যের দামই বেড়েছে। রাজধানীর বাজার সংশ্লিষ্টরা তেমনটিই জানিয়েছেন।

বাজারে খুচরা পর্যায়ে দেশী শসা ১০০ টাকা কেজি দরে, হাইব্রিড শসা ৮০ টাকা, গোল বেগুন (সবুজ) ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই দিন আগেও একই বাজারে দেশী শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, হাইব্রিডের শসা ৫০ টাকা, গোল বেগুন (সবুজ) ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

বড় আকারের এলাচ লেবুর দাম প্রতি পিস ২৫ টাকা, যা দুই দিন আগে ছিল ২০ টাকা এবং এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০ টাকা। আর মাঝারি আকার ও গোল লেবুর পিস ১৫ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আর ধনিয়া পাতার ৮০ টাকা কেজি। খুচরা বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি পর্যায়ের দাম বেশি থাকলেও খুচরা পর্যায়ে দাম খুব বেশি বাড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোজা ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখন সেটা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে যার খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীল লোকজন দাম বেঁধে দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতায় তাদের আদেশ নির্দেশ কেউ মানছে না। যে যেভাবে পারছেন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। 

বাজারে শবরি কলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৫০ টাকায়, বাংলা কলা ১০০ টাকায়, চাঁপা (চম্পা) কলা ৭৫ টাকায় ও সাগর কলা ১৪০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, দুই দিন আগে শবরি কলার ডজন ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বাংলা কলা ৮০ টাকা, চাঁপা ৬০ টাকা ও সাগর কলা ১২০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে তারা যখন কেনেন, তখন সেখান থেকেই খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তারাও সেই দামেই বিক্রি করেন। বেল প্রতি পিস আকারভেদে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আকারে একটু ছোট হলে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর কদবেলের পিস ৫০ টাকা। থাই পেয়ারার দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি ও দেশী পেয়ারা ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দুই দিন আগে ছিল থাই পেয়ারার দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও দেশী পেয়ারা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।

খেজুরের সর্বনিম্ন দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে জাতভেদে প্রায় দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। এর মধ্যে জাহিদি খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২৮০ টাকা, খুরমা খেজুর ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, দাবাস খেজুর ৪৫০ টাকা, বরই খেজুর ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মাশরুক খেজুর ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, সউদী মরিয়ম খেজুর ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, আজোয়া খেজুর ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, মেডজুল জাম্বু খেজুর ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খেজুর ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই দিনের ব্যবধানে খেজুরের দাম কিছুটা বেড়েছে। কমদামি খেজুরের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং দামি খেজুরের দাম ১০০ টাকাও বেড়েছে কেজিতে।

এদিকে আগের বাড়তি দামেই ছোলা, মসুর ডাল, খেসারি ডাল ও খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে ছোলার কেজি ১১০ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১১০ টাকা, খেসারি ডাল ১৩০ টাকা ও খোলা চিনি ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকানীরা জানাচ্ছেন, গত কয়েকদিনে এই পণ্যগুলোর দাম আর বাড়েনি, একই আছে। ক্রেতারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের নিত্যপণ্যের দামের যে অবস্থা, নিম্ন-মধ্যবিত্তরা এক ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তারা কোনো ধরনের স্বস্তি পাচ্ছে না। সেহরি ইফতার কোনো কিছুই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে না।

এদিকে খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অতি সাধারণ বা নিম্নমানের খেজুরের দাম হবে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাহিদি খেজুরের কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব স্বাক্ষরিত আদেশে এ দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আদেশে বলা হয়েছে, দেশে আমদানিকৃত বিভিন্ন মানের খেজুরের আমদানিমূল্য, আরোপিত শুল্ক ও কর এবং আমদানিকারকের অন্যান্য খরচ বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিকেজি খেজুরের মানভিত্তিক যৌক্তিক মূল্য নিরূপণ করেছে।

মূলত, রমযানে চলছে লাগামহীন নৈরাজ্য। যে সেভাবে পারছেন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সার্কুলার জারি করেই নিজেদের দায় শেষ করছেন। বাজারে তার কোন প্রতিফলন লক্ষ্য  করা যাচ্ছে না। ফলে সাধারণ রোজাদাররা বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাই রমযান মাসে রোজাদারদের রোজা পালন স্বস্তিদায়ক করতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগও নিশ্চিত করা দরকার। অন্যথায় বাজারে নৈরাজ্যবাদীদের নৈরাজ্য থামানো সম্ভব হবে না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ