ভোটের রাজনীতির কত রূপ
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ এখন ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনের বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই এই আইনকে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক বলে বিবেচনা করছেন এবং কেউ কেউ বলছেন, এটা আসলে ২০২৪ সালের ভোটকে প্রভাবিত করার একটি কৌশল। তবে সিএএ ইস্যুটি এখন ভারতের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং আইন অনুযায়ী সব সম্প্রদায়ের প্রতি সমান আচরণ মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো জাতিসংঘও এই আইনকে মৌলিক দিক থেকে বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটসের প্রধান রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। চরিত্রগতভাবে সিএএ আইনটি বৈষম্যমূলক। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতা ভঙ্গ করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে এটা বলবৎ হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিএএর সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও। তারা বলেছে, ধর্মীয় ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি না করা ও সাম্যের মূল্যবোধের কথা ভারতীয় সংবিধানে বলা হয়েছে, এই আইন তার বিরুদ্ধে বিরাট ধাক্কা। মানবাধিকার রক্ষার দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও এই আইন বেমানান। আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অব ইন্ডিয়ার পক্ষে আকার প্যাটেল বলেন, এই আইন ধর্মান্ধ; এই আইন ধর্মীয় বৈষম্যকে বৈধতা দিচ্ছে।
সিএএ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার জবাব দিয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জয়সোয়াল ১৫ মার্চ সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে যা বলেছে, তা না জেনে বলেছে। ওই মন্তব্য অবাঞ্ছিতও। সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, কেড়ে নেওয়ার নয়। উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালে সিএএ পাস হওয়ার পর ওই আইনের বিরোধিতার করে দুই শতাধিক মামলা করা হয়। ১১ মার্চ বিতর্কিত সেই আইন চালু করা হয়েছে। ১২ মার্চ ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ ওই আইন প্রয়োগে স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য জরুরি আবেদন জানায়। আবেদনকারী এবং সরকার পক্ষের কথা শুনে প্রধান বিচারপতি মামলাগুলো গ্রাহ্য করে বলেন, মোট ২৩৭টি আবেদন জমা পড়েছে। সব মামলা একসঙ্গে শোনা হবে। ১৯ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সিএএ অনুযায়ী ভারত সরকার ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি ও জৈনদের নাগরিকত্ব দেবে; কিন্তু মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।
সিএএ প্রসঙ্গে অনেক অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, এই আইন ধর্মীয় বৈষম্যমূলক। বলা হচ্ছে, এই আইন সংবিধানের সাথেও সাংঘর্ষিক, কারণ এই আইন সাম্যের মূল্যবোধকে অস্বীকার করেছে। পর্যবেক্ষকরা এখন বলছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপি সরকারের সিএএ চালু আসলে ভোটে রাজনীতিকে প্রভাবিত করার আর একটি কৌশল। এখন ভারতজুড়ে চলছে ‘মোদি কি গ্যারান্টির’ প্রোপাগা-া। বলা হচ্ছে, সিএএ চালু করা বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল। বিজেপি সরকার তা পূর্ণ করল। তাহলে সিএএ কি বিজেপির ভোট রাজীনতির তুরুপের তাস হতে চলেছে? তবে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ড খারিজ করার মতো এই আইন অসাংবিধানিক ঘোষণা করবেন কিনা, তা আমরা জানি না। তেমনটি হলে রাজনীতিতে তা প্রভাব ফেলতে পারে।