বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার গণপরিবহন ধর্মঘট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর বিআরটিসি মার্কেটে ওই সংগঠনের এক সভায় এ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদসহ ৪ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় রোববার সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট পালনের কথা জানিয়েছেন পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা। তিনি বলেন, চুয়েটে দুই ছাত্রের মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে সমাধান হওয়ার পরও আমাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের সম্পদ ও পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তা চাই। যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত বাস, মিনিবাস, কোচ, টেম্পো, অটোরিকশাসহ সব ধরনের গণপরিবহনে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে। “বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলার পরও আমাদের দাবিগুলোর সুরাহা হয়নি তাই বাধ্য হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করতে হল।”
চার দফা দাবির মধ্যে আছে, চুয়েটে দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে ৪-৫টি গাড়ি ভাংচুর ও তিনটি বাস জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় মামলা গ্রহণ, ক্ষতিপূরণ দেয়া, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার এবং চুয়েটের তিন শিক্ষার্থীকে বহনকারী মোটর সাইকেলটি নিবন্ধিত ছিল কি না, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল কি না, তিনজন একইসঙ্গে মোটর সাইকেলে ওঠার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কি না ও তারা মাদকাসক্ত ছিল কি না- এসব বিষয় তদন্তে কমিটি গঠন।
সোমবার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর জের ধরে ওইদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানোর জন্য ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রশাসন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ও হলত্যাগের নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেয় চুয়েট প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হলে থাকারও অনুমতি দেয়া হয়।
ওই রাতেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে করে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এর মধ্য দিয়ে অবরোধ তুলে নিলে চারদিন পর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ২৬ এপ্রিল জরুরি সভায় বসে চুয়েট সিন্ডিকেট। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১১ মে পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষাসহ চুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন। চুয়েটের যানবাহন শাখার সেকশন অফিসার শওকত হোসাইন জানান, শনিবার থেকে চুয়েটের নিজস্ব যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। এদিন দুপুর আড়াইটায় চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বর থেকে শিক্ষার্থী বহনকারী একটি বাস শহরের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টায় সেই বাসটি যথারীতি ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা হবে। চট্টগ্রামের রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।