ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল : ভোগান্তির শেষ কোথায়?
আলী আহমাদ মাবরুর
প্রতি বছর গরমের মওসূম এলেই পত্র পত্রিকা জুড়ে ভুতুড়ে বিল ও গ্রাহকের ভোগান্তির খবর আসে। টেলিভিশন খুললেও এ ধরনের নিউজ দেখা যায়। সেদিন একটি পারিবারিক আয়োজনে গিয়েছি। সেখানেও একই আলোচনা। একজন জানালেন, তার বিদ্যুৎ বিল যেখানে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আসে, সেখানে চলতি মাসে ১৪ হাজার টাকা বিল এসেছে। বিল দেখে তার মাথায় হাত। তিনি তার বাড়ির সবগুলো ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি চেক করেছেন। মিস্ত্রি এনে মিটার রিডিং করিয়েছেন। আগের মাসের তুলনায় অস্বাভাবিক কোনো বিদ্যুৎ খরচ হওয়ারও কোনো দৃষ্টান্ত নেই। অথচ এক মাসের ব্যবধানে বিল এসেছে ১১ হাজার টাকা বেশি।
ভুতুড়ে বিলের এই ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এর থেকে কোনো পরিত্রাণও যেন মিলছে না। যাদের বাসায় এখনো প্রি-পেইড মিটারের সংযোগ লাগেনি, তারা একটি সময়ে বেশ আফসোস করলেও এখন তারাই উল্টো স্বস্তিতে আছেন। কারণ তাদেরকে এখনো ভুতুড়ে বিলের ফাঁদে খুব বেশি পড়তে হয়নি। তবে এই সুখেও তারা খুব বেশিদিন থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যেই সরকারের তরফ থেকে প্রি-পেইড মিটারহীন গ্রাহকদেরকে অনতিবিলম্বে প্রি-প্রেইড মিটারের জন্য আবেদন করতে এবং সংযোগ ফি দিতে বলা হয়েছে। অনেক এলাকায় টাকা জমা দেওয়ার সময়সীমাও এরই মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। প্রি-পেইড মিটার কবে সংযুক্ত হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে সরকার গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাখছে। এর একটি কারণ হতে পারে যে, খুব শীঘ্রই হয়তো মিটারগুলো সংযুক্ত হবে। আবার কোনো কোনো মহলের ধারনা, সরকারের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তারা প্রি-পেইড মিটারের সংযোগ পরে দিলেও আপাতত অর্থের একটি জোগান নিশ্চিত করার জন্যই এই টাকাগুলো নিয়ে রাখছে।
ভুতুড়ে বিলের শিকার কেবলই যে ঢাকাবাসী হচ্ছে তা কিন্তু নয়। প্রায় প্রতিটি জেলাতেই এ ঘটনা ঘটছে। এমনকী অনেক জেলাতেই সাম্প্রতিক সময়ে গ্রাহকদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের খবরও পাওয়া গিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই ঠাকুরগাঁওয়ের কথা বলা যায়। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গত মার্চ মাসের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে হিসাব মিলছে না অধিকাংশ গ্রাহকের। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি বিলে অতিরিক্ত টাকা যোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিলের কপিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিপরীতে ভ্যাট, বিলম্ব মাশুল যোগ করেও চূড়ান্ত বিলের সঙ্গে গরমিল পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিল নিয়ে অফিসে ঘোরার পরও কোনো সমাধান দিতে পারছেন না সমিতির লোকজন। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজনের দাবি, গত মাসের মাঝামাঝিতে বিদ্যুৎ বিল বেড়েছে। সফটওয়্যারে সক্রিয়ভাবে সেটি যোগ হওয়ার কারণে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হারুন অর রশিদ জানান, ২০১০ সালের জুন মাসের বিল বকেয়া দেখিয়ে তাকে ২০২৩ সালে ফের নোটিশ পাঠিয়েছিল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তিনি দাবি করেন, তার কাছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দেওয়া প্রত্যয়নপত্রও রয়েছে। ওই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিলের ফরম্যাটটি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত। বর্তমানে গোটা বাংলাদেশের সব বিদ্যুৎ কোম্পানির একই ফরম্যাটে বিল করা হচ্ছে। তবে বিলে অতিরিক্ত বিলের যোগফল, ভ্যাট ও সমুদয় প্রদেয় ভ্যাটের ব্যাপারে সমিতির কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
একই ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায়। এ উপজেলার চরাঞ্চলে অনিয়ম, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার আর ভুতুড়ে বিল প্রদানে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা। বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিদ্যুৎ সমিতির এজিএমের বিরুদ্ধে। গ্রাহকেরা জানায়, টাকা না দিলে মিলে না বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে বিদ্যুৎ ভোগান্তি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারী কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারে ফুঁসে উঠছে চরাঞ্চলের দরিদ্র সাধারণ মানুষ। ভৌতিক বিল, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে অর্থ আদায়, নতুন মিটারের আবেদনের টাকা নিয়ে একের পর এক তারিখ পরিবর্তন ও হয়রানি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ইত্যাদি নানা অভিযোগ রাঙ্গাবালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের গ্রাহকদের সামান্য বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা, নতুন মিটারের আবেদন করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দিয়ে মিটার পেতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৌলভী বাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ভুতুড়ে বিলেও স্থানীয় গ্রাহকরা অতিষ্ঠ বলে জানা গেছে। বিল কপিতে ব্যবহৃত ইউনিটের কলাম শূন্য থাকলেও পরিশোধের কলামে বিরাট অঙ্কের টাকা বসিয়ে বিল সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিকার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার দাবি করেন অনেক গ্রাহক। বাড়ির ভেতরে থাকা মিটার না দেখেই নেয়া হচ্ছে ইউনিট রিডিং। গ্রাহকদের কাছ থেকে মনগড়া বাড়তি বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে, বগুড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন গ্রাহকদের অনেকেই। অভিযোগ করে কিছুক্ষেত্রে প্রতিকার মিললেও হয়রানির ভয়ে অনেকে অভিযোগও করেন না।
পিরোজপুরের নাজিরপুরে পল্লী বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাজার হাজার গ্রাহক। তাদের অভিযোগ কোনো মাসে পূর্বের মাসের দ্বিগুন আবার কোনো মাসে তার অর্ধেক বিল ধার্য করা হয়। অন্যদিকে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রায় ২৫০ জন গ্রাহকের গত মার্চ মাসের বিদ্যুতের বিল এসেছে দ্বিগুণ থেকে পাঁচ-ছয় গুণেরও বেশি। গ্রাহকদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস মিটারের কাছে না এসে অফিসে বসেই এই ভৌতিক বিল তৈরি করেছেন মিটার রিডাররা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত গরমের কারণে এ মাসে বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে।
গত ডিসেম্বর মাসে ভুতুড়ে বিলের একটি খবরে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামের একজন চা বিক্রেতা তাইজুল ইসলাম। তার বাড়িতে তিনজনের সংসারে দুইটি ভাল্ব ও একটি ফ্যান ব্যবহার হয়। গত অক্টোবর মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ৯৩ টাকা। কিন্তু নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৭ টাকা। ভুতুড়ে বিলের খবরটি জানাজানি হলে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম হয়।
নাটোরের বাগাতিপাড়াতেও আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ বিলে চরম অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিল দেখে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন গ্রাহকরা। পল্লী বিদ্যুৎ-এর এমন অস্বাভাবিক বিলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপজেলার অনেক গ্রাহক। ব্যবহৃত ইউনিট না দেখেই অতিরিক্ত বিল করা, আবার বিল নিয়ে অভিযোগ করতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ক্ষেত্রেও ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ- ৪-৫ গুণ বেশি বিল এসেছে অনেকের। ১৩ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর ৬২ হাজার টাকার বিল ২ লাখ ২৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিকার চেয়ে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হাজারো ভুক্তভোগী। যতটুকু জানা গিয়েছে যে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পকে পুঁজি করে একটি দালালচক্র বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অনেক উপজেলায় গ্রাহকদের পক্ষ থেকে এমনও অভিযোগ মিলেছে যে, বিদ্যুতের লোকেরা এসে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতে হাতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সে টাকা অফিসে জমা না দিয়ে আবার কয়েক মাস পরে নতুন করে বিল ধরিয়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। বিলের টাকা দেওয়া হলেও মিটারের কাগজ পাওয়া যায় না। কয়েক মাস পর আবার বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা এসে পুরনো বিলের বিপরীতেই টাকা চায়। টাকা দেওয়ার কয়েক দিন পর আরেকজন এসে আবার লাইন কাটার হুমকি দেয়। বলে যায় অফিসে গিয়ে দেখা করতে। অথচ অফিসে গেলে দেখা যায় গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের হাতে হাতে বিল পরিশোধ করলেও ঐ কর্মচারীরা টাকাগুলো অফিসে জমা দেননি।
পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা সরাসরি টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ভৌতিক বিল, মিটারের লাইন কেটে দেয়া এবং মিটার সংযোগে গড়িমসি করার বিষয়গুলোও তারা মানতে চান না। গতানুগতিক মন্তব্য করে তারা বলেন, কেউ যদি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বেশি কিছু নয়।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, ভুতুড়ে বিলের এ বিষয়টি কেবলই কারিগরি ত্রুটিজনিত তা কিন্তু নয়। বিদ্যুৎ অফিসগুলোর কর্মকর্তাদের অসততাও এর জন্য সমানভাবে দায়ী। এ কথা বলার কারণও আছে। করোনাকালে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল করার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর বেশ কিছু কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন নির্বাহী প্রকৌশলীও ছিলেন। করোনার ঐ সময়টাতেই বেঁধে দেওয়া সাত দিনের মধ্যে ভুতুড়ে বিল সমন্বয় করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের চারটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রায় ৩০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত টাস্কফোর্স।
দেশে অব্যাহত লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে জনজীবন এখন বিপর্যস্ত। একদিকে প্রচন্ড গরমে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অপরদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। তীব্র গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বর্তমানে গ্রামে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। কিছু সময়ের জন্য আসে আবার চলে যায়। বিদ্যুতের অভাবে সেচের পাম্পগুলো অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে পানি সেচ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষক ফসল ফলাতে পারছে না।
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকাতেও পানি সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ লাইন ধরেও পাম্পগুলো থেকে খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্পগুলো পানি সরবরাহ করতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিগত ১৫ বছরের ভয়াবহ দুর্নীতি, লুটপাট ও অনিয়মের কারণে এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে সরকার সে তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে না পারলেও সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার এবং খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে জনগণের জন্য বাড়তি ভোগান্তির কারণ হয়েছে ভুতুড়ে বিলের সংকট। মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছে না, অথচ তাদেরকে বিল দিতে হচ্ছে। তাও স্বাভাবিক মাত্রায় নয়, বরং ভুতুড়ে পরিমাণে।
এদিকে, সরকারের তরফ থেকে জানা গেছে, আগামীতে বিদ্যুতের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। এটি পরিস্কার যে, সরকার বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকী দিয়ে আর টানতে পারছে না। তাই ভর্তুকীর পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হলো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা। যদিও প্রশাসনের তরফ থেকে একে দাম বৃদ্ধি বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, তারা দাম সমন্বয় করছেন। অবশ্য বিদ্যুতের বৃদ্ধির নেপথ্যে আইএমএফসহ বৈশি^ক দাতা সংস্থাগুলোর চাপও অন্যতম কারণ। সরকার যেহেতু টাকার সংকটে আছে এবং যেকোনো মূল্যে তারা ঋণ পেতে চাইছেন তাই দাতাদের যেকোনো শর্ত মেনে নেওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায়ও নেই। কিন্তু জনগণের জন্য পুরো প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত পীড়াদায়ক এবং এই যন্ত্রণা বহন করার মতো সাধ্য তাদের নেই। একদিকে বিদ্যুতের বারবার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহককে ভুতুড়ে বিল পরিশোধের দায় নিতে হচ্ছে; অথচ যে বিদ্যুতের জন্য এত কিছু সেই বিদ্যুৎটাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুতের সর্বগ্রাসী ও ক্রমবর্ধমান সংকট সার্বিক নাগরিক জীবনটাই স্থবির করে দিয়েছে। সহসাই এর পরিত্রাণের কোনো আভাসও মিলছে না।