অল্প সময়ে কমিউনিটি ব্যাংকের অর্জন ঈর্ষণীয়
স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশের চতুর্থ প্রজন্মের বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পথ চলা শুরু করে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ। সে হিসেবে আজ ১১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির পাঁচ বছর পূর্তি। প্রতিষ্ঠার সময় ‘আস্থা, নিরাপত্তা, প্রগতি’ ছিল কমিউনিটি ব্যাংকের মূল ভিত্তি। সেই ভিত্তি ধরে ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে অত্যাধুনিক, নিরাপদ ও আস্থাশীল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিউনিটি ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। শতভাগ পুলিশ সদস্য মালিকানাধীন এই ব্যাংকটির পাঁচ বছরের সার্বিক কার্যক্রমের সালতামামি করলে অর্জনের পাল্লাই ভারী, দাবি সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংক এমন কিছু অর্জন করেছে, যা অনেকের কাছে ঈর্ষণীয়।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীভুক্ত প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ব্যাংকটির গত পাঁচ বছরে যত সাফল্য, তা হলো- কমিউনিটি ব্যাংক দেশের ৬৪টি জেলায় সার্ভিস পয়েন্ট প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বেতন ভাতা প্রদান, এ টি এম বুথের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন ও বেতন হিসাব হতে লোন সুবিধার মাধ্যমে দুই লাখ পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি আরও অর্ধলক্ষ গ্রাহককে সেবা প্রদান করা হয়। কমিউনিটি ব্যাংক ১৮টি শাখা এবং দুটি উপশাখার মাধ্যমে দেশের বৃহৎ, ক্ষুদ্র, মাঝারি ঋণ বিতরণ, কৃষি ঋণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। ব্যাংকটি ২০২৩ সালে বৃহৎ, ক্ষুদ্র মাঝারি ঋণ বিতরণ, কৃষি ঋণে ১৩০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।
এছাড়া কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ডিজিটাল উদ্ভাবনা এবং সেবার উৎকর্ষতার জন্য পর পর পাঁচ বৎসর আন্তর্জাতিক পরুস্কার অর্জন করেছে। ইনফয়সিস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড সমূহের মধ্যে প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ইকো সিস্টেম অ্যাওয়ার্ড, ডিজিটাল ইনোভেশান অ্যাওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দশমিক পাঁচ শতাংশের নিচে শ্রেণিবদ্ধ ঋণ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকিং সেক্টরে সর্বনি¤œ। ইমার্জিং ক্রেডিট কর্তৃক বাহ্যিক ক্রেডিট রেটিংয়ে ব্যাংকের স্বল্প মেয়াদী রেটিং দুই এবং দীর্ঘ মেয়াদিতে এএ- ধারা অব্যাহত রাখা ব্যাংকটির অন্যতম সফলতা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ঝুঁকি ভিত্তিক পর্যালোচনায় ব্যাংকের সার্বিক ঝুঁকি নি¤œ হিসাবে মূল্যায়ন হওয়ায় গ্রাহকের আস্থা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ২০২২ এবং ২০২৩ সালে যথাক্রমে চার এবং ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। যাহার মোট পরিমাণ ৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা শেয়ারহোল্ডারকে লভ্যাংশ প্রদানে সক্ষম হয়। যা অন্য ব্যাংকের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় ছিল না।
কমিউনিটি ব্যাংকের সূচনা লগ্ন থেকে মশিউল হক চৌধুরী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তার শিক্ষাগত জীবনে ১৯৯২ সনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতোকোত্তর শেষে আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে যোগ দেন। চাকরি জীবনে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, সিটি এনএ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে দেশে ও বিদেশে সুনামের সঙ্গে দায়িত্বরত ছিলেন বলে জানা গেছে। আগামী নবেম্বরে তার দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগকাল শেষ হবে। তার বাবা শামসুল হক চৌধুরী, যিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সুপ্রীম কোর্ট বারের সর্বোচ্চ ছয়বার সভাপতি নির্বাচিত হন। তার নামে সুপ্রিমকোর্ট বারে একটি মিলানায়তনও রয়েছে।
ব্যাংকটির পাঁচ বছর পূর্তির আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর পরিচালনা পর্ষদের ৫৬তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন আইজিপি ও কমিউনিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ময়নুল ইসলাম। সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, এ বোর্ড সভায় ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম ও সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে সেবার মান ও সফলতা অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরো মনোযোগি হতে বোর্ড সদস্যরা দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহের মাধ্যমে কমিউনিটি ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ব্যাংকটি দেশব্যাপী ১৮টি শাখা ও ২টি উপশাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে এই ব্যাংকটির দেশব্যাপী শাখা বিস্তারের কাজ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী যেহেতু ব্যাংক চালুর প্রথম তিন বছরের মধ্যে শেয়ার হোল্ডারদের মাঝে লভ্যাংশ বিতরণ করা হয় না, তাই লাভের টাকা পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।
কোর ব্যাংকিং সফটওয়ারের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী কমিউনিটি ব্যাংক দেশব্যাপী ইতোমধ্যেই ১৮০টি এটিএম বুথ স্থাপন করেছে। অত্যন্ত দক্ষতা, সক্ষমতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে নতুন চালুকৃত ব্যাংকে কোর ব্যাংকিং চালু করার ৪৮ দিনের মধ্যেই কমিউনিটি ব্যাংক ‘ফিনানশিয়াল ইনফসিস ইনোভেশান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এত অল্প সময়ে কোর ব্যাংকিং এমন সুচারুভাবে সম্পন্ন করার নজির বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে ছিলনা। এছাড়াও গ্রাহকগণ আইটিসিএল ও এনপিএসবি সুবিধার আওতায় দেশের অন্যান্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারছেন। ব্যাংকটির ডিজিটাল ট্রানজেকশন সুবিধা ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদসহ ইএফটির মতো সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারছেন।
জানা গেছে, কমিউনিটি ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের জন্য সমান শেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে আইজিপি থেকে কনস্টেবল এবং পুলিশে কর্মরত সকল নন-পুলিশ ও সিভিল সদস্যরা একটি করে শেয়ারের মালিক। এখানে ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালনকারী আইজিপির একটি শেয়ার, তেমনিভাবে নি¤œ পদস্থ পুলিশ সদস্য যেমন কনস্টেবলেরও একটি শেয়ার রয়েছে। সমবায়ের এমন নজির খুবই বিরল। ৫০০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে পথচলা শুরু করা কমিউনিটি ব্যাংকের পাঁচ বছরেই গ্রাহক আমানত ৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, নতুন একটি ব্যাংক হিসেবে যা অনন্য অর্জন।
ব্যাংকের গত পাঁচ বছরের ঋণের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পুলিশের নি¤œ পদস্থ বিশেষ করে কনস্টেবল, নায়েক ও এএসআইদের জন্য এক আর্থিক আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কমিউনিটি ব্যাংক থেকে দুই হাজার তিনশত ৬৭ কোটি টাকা স্বল্প সুদে সহজ শর্তে প্রায় ৬৫ হাজার পুলিশ সদস্য ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। চলতি বছরের ৯ সেপ্টম্বরের হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকের তারল্য বেশ ভালো অবস্থানে, যা এডভান্স ডিপোসিট রেট ৭৫.৮৫ শতাংশ। মোট ঋণ ৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা এবং জামানতের পরিমাণ ৬ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এভাবেই কমিউনিটি ব্যাংক দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।
বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের কল্যাণ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কমিউনিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলেও দিনে দিনে এটি গণমানুষের ব্যাংকে পরিণত হচ্ছে। ব্যাংকটি যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে এগিয়ে চলছে, তাতে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই কমিউনিটি ব্যাংক দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক ও ব্যাংকিং সেবা উন্নয়নের অন্যতম বড় প্রভাবক হিসেবে আবির্ভূত হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কমিউিনিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউল হক চৌধুরী বলেন, গেল কয়েক বছর গোটা বিশ্ব এক নজিরবিহীন মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে পার করেছে। প্রতিষ্ঠার পরপরই বিশ^ব্যাপী কোভিড এর কারণে সার্বিক অবস্থা স্থবির হয়ে যায়। তারপরও বিপৎসংকুল এ সময়ে আমরা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্য পেয়েছি। মহামারি না হলে হয়তো আমরা আরো বেশি বড় ও বিস্তৃত হতে পারতাম। দুর্যোগের মধ্যেও যে ভিত তৈরি হয়েছে, তার ওপর ভর করে কমিউনিটি ব্যাংক বহুদূর পাড়ি দিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে কমিউনিটি ব্যাংক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। আমাদের ঝুলিতে জমা হয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমরা দেশের সব জেলায় এ কমিউনিটি ব্যাংকের সেবার বিস্তৃতি ঘটাতে পেরেছি। আমরা শুধু পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের ব্যাংক হতে চাই না। সারা দেশের সব মানুষের ব্যাংক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।