সোমবার ১১ নবেম্বর ২০২৪
Online Edition

জম্মু ও কাশ্মীরে ভোট : ঝুলন্ত এসেম্বলী হতে পারে 

আহমদ মতিউর রহমান

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন মোটামুটি ভালোয় ভালোয় শেষ হলো। এবার পরিস্থিতি আলাদা, ২০১৪ সালের মতো পূর্ণ রাজ্য হিসেবে নয়, ভোট হয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে বিশেষ মর্যাদা হারানোর পাশাপাশি রাজ্যের তকমাও হারিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। লাদাখ অঞ্চলটিও রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করার মধ্যে দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ স্বীকৃতি বিলুপ্ত করা হয়। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ (ক) ধারাকে অকার্যকর করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা খর্ব করেন এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে সেই দুটিকে ভারতের দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সেই বিতর্কিত পদক্ষেপের পর এই প্রথম ওই অঞ্চলে বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হলো। ক্ষমতাসীন বিজেপি বরাবরই বিরোধীদের সমালোচনা করে বলেছে, যতই চেষ্টা করা হোক, ৩৭০ ধারা আর কোনো দিন ফেরানো যাবে না। তবে নির্বাচনে যারা ভোট যুদ্ধে নেমেছে তারা সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই ধারা ফিরিয়ে আনার। রাজ্যের ৯০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় ২৪টি আসনে, দ্বিতীয় দফায় ২৫ সেপ্টেম্বর ২৬ আসনে ও ১ অক্টোবর তৃতীয় তথা শেষ দফায় ৪০ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। ৮ই অক্টোবর ফল ঘোষণার কথা রয়েছে। কথা হচ্ছে কারা বিজয়ী হবে? আর সেই হারানো ব্যবস্থা ফিরবে কি না সে প্রশ্নটি এখন মুখ্য। এবার নির্বাচনে মূলত ত্রিমুখী লড়াই দেখা গেছে। একদিকে রাজ্যটির সাবেক ক্ষমতাসীন দল ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’ - কংগ্রেস জোট প্রার্থীরা, অন্যদিকে নির্বাচনী ময়দানে ছিল বিজেপি ও আরেক সাবেক ক্ষমতাসীন দল ‘পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের’ (পিডিপি) প্রার্থীরা। এছাড়াও আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, পিপলস কনফারেন্স, আপনি পার্টি, ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ আজাদ পার্টির মতো কয়েকটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও লড়াই করেছেন ৫ অক্টোবর হরিয়ানা রাজ্যের বিধানসভা ভোট রয়েছে। তা শেষ হলে একসঙ্গে দুই রাজ্যের জনমত ফেরত সমীক্ষা প্রকাশিত হবে। তখনই একটা ধারণা পাওয়া যাবে জম্মু কাশ্মীরে ক্ষমতায় কে আসতে চলেছে। 

বিশ্লেষণে যাবার আগে কিছু তথ্য জেনে নেই। জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের মুসলিম প্রধান কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যা আগে ছিল রাজ্য। শ্রীনগর  গ্রীষ্মকালীন এবং জম্মু শীতকালীন রাজধানী। জনসংখ্যা এক কোটি ৫৬ লাখ। কাশ্মীরের ৯৫ শতাংশ মুসলিম আর জম্মুর হিন্দু জনসংখ্যা ৭০ ভাগ, বাকি ৩০ শতাংশ মুসলিম। কাশ্মীর উপত্যকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এ জন্য একে বলা হয় ভূস্বর্গ। ভারতের একটি বিখ্যাত ট্রাভেল স্পট কাশ্মীর। পর্যটন থেকে বিপুল আয় হয়। তবে সহিংসতা আর সরকারের বিধিনিষেধের কারণে তা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জম্মু অঞ্চলে অনেক হিন্দু মন্দির থাকায় এটি হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। দেশ বিভাগের সময় ভারতবর্ষের মুসলিম প্রধান এলাকাগুলো পাকিস্তানভুক্ত হলেও কাশ্মীর বাইরে থেকে যায়। কী কারণ? ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভাজনের অন্যতম শর্ত ছিল ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন অথবা তারা স্বাধীনতা বজায় রেখে শাসনকাজ চালাতে পারবেন। ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর বিদ্রোহী নাগরিক এবং পশতুন উপজাতিরা কাশ্মীর রাজ্য আক্রমণ করে। ভিন্ন মতও আছে। যাই হোক, কাশ্মীরের রাজা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেও গভর্নর-জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কাছে সহায়তা চান। কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতভুক্তির পক্ষে স্বাক্ষর করবেন এই শর্তে মাউন্টব্যাটেন কাশ্মীরকে সাহায্য করতে রাজি হন। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি সই হওয়ার পর ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশ করে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ভারত বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করে। জাতিসংঘ ভারত ও পাকিস্তানকে তাদের অধিকৃত এলাকা খালি করে দিয়ে তার অধীনে গণভোটের প্রস্তাব দেয়। ভারত প্রথমে এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫২ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচিত গণপরিষদ ভারতভুক্তির পক্ষে ভোট দিলে ভারত গণভোটের বিপক্ষে মত দেয়। ভারত ও পাকিস্তানে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি তত্ত্বাবধানে আসে। এই গোষ্ঠীর কাজ ছিল, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা ও তদন্তের রিপোর্ট প্রত্যেক পক্ষ ও রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের কাছে জমা দেওয়া। যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে কাশ্মীর থেকে উভয় পক্ষের সেনা প্রত্যাহার ও গণভোটের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ভারত গণভোটে অসম্মত হয় এবং এজন্য পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহারে অসম্মত হয়। মুসলিম প্রধান কাশ্মীর ও অন্যান্য কারণকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়। এরপর ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ হয়। এই হলো কাশ্মীরের বিগত ৭৫ বছরের ইতিহাস। মুসলিম প্রধান কাশ্মীর হিন্দু প্রধান ভারতের সাথে মিশে গেলেও সেখানকার জনগণ তা মনে প্রাণে মেনে নেয়নি। আর কয়েকটি যুদ্ধ হলেও বিষয়টি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেও নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে এর একাংশ ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও অপর অংশ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর নামে পরিচিত। ৩৭০ ধারা বিলোপের ফলে কাশ্মীরের মুসলিম জনগণ আরো শোষিত হচ্ছে। 

কাশ্মীর উপত্যকায় চিরাচরিতভাবে প্রভাব বেশি দুটি আঞ্চলিক দলের। তা হচ্ছে ফারুক আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)। এরা দুজনেই এক সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে ওমর আবদুরøাহ। ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার পর সাবেক শীর্ষ কাশ্মিরী নেতা মুফতি সাঈদের কন্যা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী  মুফতি মেহবুবা কয়েক বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। কারাগারে ছিলেন আরো অনেক নেতা। ন্যাশনাল কনফারেন্স ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ও আসন সমঝোতা করে এবার ভোটে লড়েছে। অপর প্রধান দল পিডিপি ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি আলাদা করে লড়েছে। তারা ২০১৪ র নির্বাচনের পর একসঙ্গে সরকার গড়েছিল। ২০১৪ সালে কাশ্মীর রাজ্যের বিধান সভায় আসন ছিল ৮৭টি। সবচেয়ে বেশি আসন পায় পিডিপি ২৮ আসন। বিজেপি ২৫, এনসি ১৫ এবং কংগ্রেস পায় ১২ আসন। তিনটি ছোট দল ৪টি ও নির্দলীয়রা পান ৩ আসন। কিন্তু এ বছর সে পরিস্থিতি নেই। ফলে ভোট ও আসন প্রাপ্তি কমবেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপি নেতা রবিন্দর রায়না মনে করেন তার দল এবার আরো ভাল করবে। রাজ্যের মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ডেমোক্রেটিক পার্টির মতো দলগুলো তাদের প্রচারণার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। 

জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে শেখ আবদুর রশিদের আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি। তারা অনানুষ্ঠানিকভাবেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কৌশলগত জোটে গিয়েছে। এবারের নির্বাচনে কাশ্মীর জামায়াত ভোটে লড়ছে। হয়েছে ‘জামায়াত-ইঞ্জিনিয়ার’ জোট। এই ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী রশিদ ইঞ্জিনিয়ার। তারা কাশ্মীরের পুরনো দু’টি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আবদুল্লা পরিবারের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও মুফতি পরিবারের নেতৃত্বাধীন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)র বিরুদ্ধে লড়ছে। জামায়াত ১৯৮৭তে রাজ্য বিধানসভার ভোটে শেষবারের মতো লড়েছিল। পর্যবেক্ষকরা বলেন, সেই ভোটে তাদের ভাল ফল করার সম্ভাবনা থাকলেও কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের মদতে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে ফারুক আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্সকে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯-এ পুলওয়ামাতে যে জঙ্গী হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় আধা সামরিক সেনা নিহত হয়, তারপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। 

আনন্দবাজার অনলাইন জানাচ্ছে, ‘বড় কোনও অশান্তি ছাড়াই মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের ৪০টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৫০৬০টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটদানের হারে নজির গড়ল জম্মু ও কাশ্মীর। তৃতীয় তথা শেষ দফায় ৬৫ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে। প্রথম দফায় ৬১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় প্রায় ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। —- অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপ করার পর প্রথম বিধানসভা ভোটে লড়াই মূলত ত্রিমুখী ন্যাশনাল কনফারেন্স-কংগ্রেস জোট, পিডিপি এবং বিজেপির মধ্যে। এ ছাড়া বারামুলার নির্দল সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার রশিদের গড়া নতুন দল ‘আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি’ এবার কাশ্মীর উপত্যকার কয়েকটি আসনে ভাল ফল করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।’

নির্বাচনে মোদির দল কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছে। ভারতের পত্র পত্রিকা জানাচ্ছে, স্থানীয় রাজনীতিকরা মনে করছেন, আবারও একটি ঝুলন্ত বিধানসভার দিকে যাচ্ছে কাশ্মীর। শাসন করার জন্য কোনো একক দল বা জোটের যথেষ্ট সমর্থন নেই। তবে ভোটের ফল যাই হোক না কেন কাশ্মীরের শাসন দিল্লীর হাতেই থাকবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতীয় রাজনীতি বিশ্লেষক রাশেদ কিদওয়াই বলেন, যেকোনো জোট সরকার কাশ্মীরে স্থিতিশীলতা আনতে পারবে বলে মনে হয় না। সেই হিসেবে আগামী পাঁচ বছর দিল্লী-শ্রীনগরের সম্পর্ক সংঘাতময় দেখতে পাচ্ছি। 

কাশ্মীরে পাঁচ লাখের বেশি ভারতীয় সেনার উপস্থিতি রয়েছে। এত সেনার উপস্থিতি স্থানীয় বান্দিাদের অস্বস্তির কারণ। বারামুল্লা জেলার বাসিন্দা আবদুল রহিম রাহ বলেন, ‘কাশ্মীরের জনগণের মতকে মোদি সরকার গ্রহণ করে না। আমরা রাজনৈতিকভাবে স্বস্তি পেতে ভোট দিয়েছি।’ বিবিসির বিশ্লেষক অরুণোদয় মুখার্জি বলছেন : ১৯৯০ এর দশক থেকে এই অঞ্চলে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহে বেসামরিক এবং নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যসহ হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে। এর আগে নির্বাচন সহিংসতা এবং বয়কটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কারণ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভোটকে দিল্লীর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এবং বৈধতা দেওয়ার একটি উপায় হিসাবে দেখেছিল। উচ্চ ভোটার উপস্থিতি এখন একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় - এখানকার লোকেরা বলে যে তারা তাদের কথা শোনার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছে। প্রথম দফায় ভোট দেওয়ার পর ৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইউসুফ গানাই বলেন, “আমাদের এলাকায় দারিদ্র্যের মাত্রা মারাত্মক। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে চাকরির অভাবে শিক্ষিত তরুণ কাশ্মীরীদের “ঘরে বসে থাকতে” বাধ্য করেছে। তার এই বিশ্লেষণ থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্পষ্ট। বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে কাশ্মীরী মুসলিমদের বুঝানো হয়েছে। কিন্তু তারা যতটা না বিচ্ছিন্ন হতে চায়, তার চেয়ে বেশি চায় আগের অধিকার আর কাশ্মীরের আলাদা বৈশিষ্ট্য পুনর্বহাল। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীরের জনগণ শেষ পর্যন্ত তাদের রায় জানাতে সক্ষম হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। আগের নির্বাচনে সেখানে একটি জোট সরকার গঠিত হয়েছিল। সেই সরকার ভেঙে যায় ২০১৮ সালে। ৫ বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীর আছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধীনে। সেখানে কোনো স্থানীয় প্রতিনিধি নেই। ফলে এই নির্বাচনে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষা পূরণ হবে তাদের। 

বিজেপি সরকারের দাবি জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বা স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা এবং তা কেন্দ্রীয় শাসনের সরাসরি অধীনে আনার ফলে শান্তি ও উন্নয়ন এসেছে। গত মার্চে সেখানে সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এ সময় সেখানকার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ৭০ কোটি ডলার ব্যয় করার কথা ঘোষণা করেন। এর আগে বিজেপি এখানে নির্বাচন করেনি। কাশ্মীর উপত্যকায় বিধানসভার আসন সংখ্যা ৪৭। তার মধ্যে মাত্র ১৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তারা। দলটির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে জম্মুকে মনে করা হচ্ছে। এখানকার বিধানসভার আসন ৪৩টি। এটি হিন্দু অধ্যুষিত। ফলে বিজেপি সেখানে ভাল করবে বলে মনে করা হচ্ছে। লড়াইটা মূলত হবে বিজেপি আর কংগ্রেসের মধ্যে। 

বিজেপি যত ভাল কথাই বলুক কাশ্মীরের বেশির ভাগ মানুষই বিজেপিকে দেখে এমন একটি দল হিসেবে, যারা তাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়েছে। এমন ঘটনায় অনেকে হতাশাগ্রস্ত। তারা অনেকে ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে পত্রপত্রিকা সূত্রে জানা যাচ্ছে। তাদের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়া প্রসঙ্গে এক জন ভোটার বলেন, আমাদেরকে কিছুই বলতে দেয়া হয়নি। এই বলতে না দেয়া তথা কাশ্মীরে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ অভিযোগ আছে ভারতের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভারত সরকার তা অস্বীকার করে। কিন্তু সমালোচকরা বলেন, এই অধিকার লঙ্ঘন গত কয়েক বছরে তীব্র হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করে, ভারত সরকার সেখানে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ভিন্ন মতাবলম্বীদের মুখ বন্ধ করতে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ব্যবহার করে খেয়াল খুশিমতো আটক বন্ধ করার আহ্বান জানায় তারা। এ বিষয়ে সবসময়ই কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিজেপি সরকার। নির্বাচনের কারণে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে উপত্যকা। বিগত কয়েক দিন ধরে বার বার জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে জম্মু ও কাশ্মীরে। সেই কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা সাজিয়েছে প্রশাসন। সশস্ত্র আধা সামরিক বাহিনী (সিএপিএফ) থেকে শুরু করে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সাজানো হয়েছে বহু স্তরে। 

বিজেপি ছাড়া সব দল ওই অঞ্চলের বিশেষ স্বীকৃতি ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও বলছে, আর এই নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে এই প্রশ্নে একটা গণভোট হিসেবে। যদিও দেশের কেন্দ্রীয় সরকার একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছে তা আর কখনওই হওয়ার নয়! রাজ্যের স্বশাসনের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি নাকচ করে দিলেও ভারতের শাসক দল বিজেপি অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ‘নির্বাচনের পরে একটা উপযুক্ত সময় দেখে’ জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহাল করা হবে। এই নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্সের ইস্তেহারে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এদিকে কংগ্রেস ৩৭০ ধারা নিয়ে ‘নীরব’। তবে তারা জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইস্তেহারে। এদিকে একলা পথ চলা পিডিপি দাবি করছে, বিজেপি বিরোধী একটি সরকার গঠনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই নির্বাচনে। ৮ অক্টোবর ফল ঘোষণার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ

string(13) "44.211.34.178"