শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪
Online Edition

মুসলিমবিরোধী উৎকট মানসিকতা

নানা রকম যুদ্ধের ইতিহাস পড়েছে পৃথিবীর মানুষ। তবে বর্তমান সময়ের প্রপাগান্ডা যুদ্ধ যেন তার সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে এবং নানা কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে শক্তিমানরা এখন স্বীয় স্বার্থ উদ্ধারে ও বিভ্রান্তি ছড়াতে বেশ তৎপর রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী অপপ্রচারের কথা। বর্তমান সময়ে পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে মুসলমানদের নানাভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ পৃথিবীখ্যাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। বর্তমান পৃথিবীর সন্ত্রাসী ঘটনায় মুসলমানদের জড়িত থাকার সংখ্যা খুবই কম। মুসলিম নামধারী যে দু'একজনের নাম সন্ত্রাসী ঘটনায় আসে সেখানেও রয়েছে রকমফের। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

সম্প্রতি আল কায়দার কথিত এক জঙ্গির কাছ থেকে ‘অন্তর্বাসবোমা' উদ্ধার নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বলা হয়েছিল, ওই বোমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমান ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছিল আল কায়দা। তবে এ নিয়ে নতুন নতুন তথ্য উদঘাটিত হচ্ছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ওই বোমা উদ্ধারের ঘটনা অনেকটাই সাজানো। কথিত যে জঙ্গির কাছ থেকে বোমা উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে, তিনি মার্কিন বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভ ও এমআই সিক্সটিন ইত্যাদি সংস্থার এজেন্ট বা গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। গত ১১ মে সিএনএন ও রয়টার্স জানায়, এইসব গোয়েন্দা সংস্থাই আল কায়দার তথ্য সংগ্রহের জন্য তাকে ওই জঙ্গি গোষ্ঠীতে অনুপ্রবেশ করিয়েছিল। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা ওই অন্তর্বাসবোমা হামলা ঘটনার রহস্য ফাঁস করতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। একদিকে মুসলমানদের জঙ্গি বানানো এবং অপরদিকে তাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর নানা প্রপাগান্ডা একে একে মানুষের কাছে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। জানা গেছে, ভার্জিনিয়ার জয়েন্ট ফোর্সেস স্টাফ কলেজে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি বিতর্কিত কোর্স পড়ানো হচ্ছিল। ঐ কোর্সে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের পাশাপাশি ইসলামের পরিত্রতম নগরী মক্কার ওপর সম্ভাব্য পরমাণু বোমা হামলার কথাও ছিল। তবে এটি নিয়ে বিতর্কের পর তা বাতিল করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি বলেন, ‘এই কোর্সটি খুবই আপত্তিকর। এটি আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং একাডেমিক দিক থেকেও এটি যথার্থ ছিল না।'

গণমাধ্যমে জানাজানি এবং আপত্তি ওঠার পর মুসলিমবিরোধী কোর্সটি বাতিল করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কলেজে। তবে এই ঘটনায় মুসলিমবিরোধী মানসিকতার উৎকট প্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে। অথচ এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে ইসলামকে। আসলে ইসলামে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। আর কোনো মুসলমান সন্ত্রাসী হতে পারে না। তবে মুসলমান নামধারী কাউকে দিয়ে যদি কোনো মহল ইসলামবিরোধী কিছু করায় সেটা ভিন্ন কথা। ইসলামে সন্ত্রাস নেই, তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা চালানোর কথা আছে। ইসলামী পরিভাষায় যাকে অভিহিত করা হয়েছে ‘জেহাদ' হিসেবে। এই জেহাদ হতে পারে নিজের লোভ-লালসার বিরুদ্ধে, সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ভিনদেশী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। তাই যারা ইসলামকে বুঝতে চান, তাদের অবশ্যই বুঝতে হবে জেহাদ ও সন্ত্রাসের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়টি। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এখন কেউ কেউ না বুঝে ইসলামের জেহাদের বিষয়টিকে বিতর্কিত করছে, আবার কোনো কোনো মহল জেনেবুঝেই জেহাদের অপব্যাখ্যা করছে। লক্ষ্য ইসলাম ও মুসলমানদের ইমেজ নষ্ট করা। বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং কর্তব্যকর্মেও হতে হবে আন্তরিক।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ