বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

মশার দাপটে অসহায় রাজধানীবাসী

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : ‘রাতে মশা, দিনে মাছি / এই নিয়ে কোলকাতায় আছি।’ সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর এক কবির কথাটি আজো ঢাকার বেলায় অনেকটা সত্য। মশার উৎপাত কিছু দিনের ব্যবধানে আবার বেড়েছে। আগে মনে করা হতো, শীতকালে মশার দাপট থাকে না। সাম্প্রতিককালে কোথাও কোথাও দেখা গেছে, শীতও বাড়ছে, মশাও বাড়ছে। হয়তো পরিবর্তিত আবহওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিখছে এই বিরক্তিকর পতঙ্গও।

অভিযোগ উঠেছে , রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জলাশয়গুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এগুলো মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী অভিযোগ করছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে। দুই সিটি করপোরেশনই বলছে, মশার উপদ্রব বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ দিকে , মশা মারার কীটনাশক কেনায় অনিয়মের কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি ) কমপক্ষে এক কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের ক্রয়নীতি উপেক্ষা করে কেনা এই কীটনাশকের মান নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণ সিটি মেয়রের কাছে সম্প্রতি নাগরিক সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে ড. মাহবুবের দেয়া এক অভিযোগ পত্রে এই অনিয়মের বিবরণ তুলে ধরা হয়। অভিযোগ পত্রটির অনুলিপি সংশ্লিষ্টদের কাছেও দেয়া হয়েছে ।

মশার দৌরাত্ম্য বাড়ার সাথে বহুল প্রচলিত ‘ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই’ কথাটাও জড়িয়েছে। মশার ডিমান্ড না থাকলেও সাপ্লাই কিন্তু অনিঃশেষ। এ অবস্থায় হরেক কিসিমের কয়েল, মশাদমনের র‌্যাকেট, এমনকি জাদুর মশারির বিজ্ঞাপন ও বিপণন চলছে। বছরের পর বছর দুই সিটি কর্তৃপক্ষই কোটি কোটি টাকার মশা মারার ওষুধ আর সরঞ্জাম কিনছে । এভাবে বাজেট শেষ হলেও মশার জ্বালা থেকে নিস্তার মেলে না নগরবাসীর ।

উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের বেশ ক’জন কাউন্সিলরের সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকার বাসিন্দারা মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। উপদ্রব বাড়ায় মশা নিয়ন্ত্রণে দুই বেলা ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, সারা বছরই মশার ওষুধ ছিটানো হয়। কয়েক দিন ধরে মশার উৎপাত বাড়ায় সব এলাকায় সকাল-বিকেল দুই বেলা ওষুধ দেয়া হচ্ছে। তারপরও কোনো এলাকায় কাজ না হলে কেউ খবর দিলে ওষুধ ছিটানোর জন্য লোক পাঠানো হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জলাশয়গুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এগুলো মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ভরা ডোবা ও খালগুলোয় পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল জমে থাকায় এবং পানি ঠিকমতো নামতে না পারায় দূষিত পানিতে মশার জন্ম হচ্ছে। গুলশান-বনানী লেক, রামপুরা খাল, মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল, রূপনগর খাল সব কটির প্রায় একই চিত্র। বারোয়ারি ময়লা বর্জ্য জমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এগুলো মশা জন্মাচ্ছে।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ , শীতে মশার এত দাপট। কোনো দিন ভুলে জানালা খোলা থাকলে সেদিন আর কোথাও দু মিনিট বসা যায় না। মশার ভয়ে সারা দিনই দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেছেন, তাদের এলাকায় প্রতিদিন মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয় না। দিনের বেলাতেই মশার যন্ত্রণায় তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। রাত হলে এ যন্ত্রণা আরও বাড়ে। কয়েল, মশারি, ওষুধ স্প্রে কোনো কিছুতেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

ডিএনসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান বলেন, কয়েক দিন ধরে এলাকার লোকজন মশার উৎপাত বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন। মশা নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিকভাবে কাজ করা হচ্ছে। মশার লার্ভা ধ্বংস করতে সকালে তরল ওষুধ ছিটানো হচ্ছে আর উড়ন্ত মশা মারতে বিকেলে ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে।

গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র নির্বাচনের আগে ঢাকার দুই মেয়রই বলেছিলেন, ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা মশা। মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির ২৭৯ এবং ডিএসসিসির ২৮৪ জন কর্মী আছেন। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন নিয়মিত ওষুধ স্প্রেসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ব্যয় করেছে ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ডিএনসিসির চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

মশক নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দে কিছুটা পিছিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী ডিএসসিসি মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যয় করেছে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মশার বংশবিস্তার রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মশাবাহিত রোগ বিশেষ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হিসেবে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, লিফলেট বিতরণ ও পোস্টার লাগানো হয়েছে।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন , বিচ্ছিন্নভাবে ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ধ্বংস করতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত লোকজনের দক্ষতা বাড়াতে হবে। মশার ওষুধগুলো কাজ করছে কি না, কোন ধরনের ওষুধ দেয়া প্রয়োজন, সে সব বিষয়ে গবেষণা জরুরি।

কীটনাশক ক্রয়ে অনিয়ম : কীটনাশক কেনায় অনিয়মের কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কমপক্ষে এক কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে। সরকারের ক্রয়নীতি উপেক্ষা করে কেনা এই কীটনাশকের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত ২০ নবেম্বর দক্ষিণ সিটি মেয়রের কাছে দেয়া এক পত্রে ( দু’পাতার ) এই অনিয়মের বিবরণ তুলে ধরেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ড. মাহবুব। তার পত্রে বলা হয়, কীটনাশক একটি বিপজ্জনক সংবেদনশীল পণ্য। দেশে কীটনাশক আমদানি, উৎপাদন, সংরক্ষণ, ক্রয়, বিক্রয় প্রভৃতি বিষয়ে সরকারের আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘দি পেস্টিসাইড অর্ডিন্যান্স-১৯৭১’ এবং ‘দি পেস্টিসাইড রুলস-১৯৮৫’ এর আলোকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কীটনাশক সম্পর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িত যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, খামারবাড়ি থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হয়। কিন্তু দক্ষিণ সিটির ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগ থেকে জি-টু-জি নীতির আলোকে গত ১ সেপ্টেম্বর দুই লাখ লিটার কীটনাশক এডাল্টিসাইড (রেডি ফর ইউজ) সরবরাহের জন্য নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ডকইয়ার্ড একটি ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প প্রতিষ্ঠান। এখানে জাহাজ তৈরি, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়ে থাকে। তাছাড়া, ইঞ্জিনিয়ারিং সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমিত বাণিজ্যিক কাজেও এ প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে থাকে। কীটনাশক একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিপজ্জনক পণ্য। এটার উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের জন্য সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন পরিবেশ, অবকাঠামো এবং দেশের প্রচলিত সকল নিয়মকানুন রেজিস্ট্রেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের লাইসেন্স গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু জানামতে ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিঃ-এর এ ধরনের কোনো রেজিস্ট্রেশন লাইসেন্স নেই। এ পর্যায়ে ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিঃ কীটনাশক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি গৌরব ইন্ডাস্ট্রিজ নামক একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে ইতিমধ্যে ২০ হাজার লিটার কীটনাশক সরবরাহ করে। বাকি কীটনাশক পর্যায়ক্রমে সরবরাহের কথা আছে। ওদিকে যে প্রক্রিয়ায় ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লি.কে সরাসরি দুই লাখ লিটার কীটনাশক এডাল্টিসাইড (রেডি ফর ইউজ) সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে তা আইনসিদ্ধ নয় বলে পত্রে দাবি করা হচ্ছে।

ডিএসসিসি সূত্রমতে, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে উন্মুক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কীটনাশক, এডাল্টিসাইড (রেডি ফর ইউজ) প্রতি লিটার ৩৮৩ টাকা দরে সর্বমোট ১,১৫০০০ লিটার ক্রয় করেছে। কিন্তু এবার উন্মুক্ত দর প্রক্রিয়া (ইজিপি) উপেক্ষা করে প্রতি লিটার ৪৩৪.৫০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। এতে এক কোটি তিন লাখ টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে ডিএসসিসিকে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগে প্রকাশ।

তবে ডিএসসিসি সূত্রে এ অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয় , জি-টু-জি পদ্ধতিতে এই কীটনাশক সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ডকইয়ার্ড কোত্থেকে কিভাবে এটা সরবরাহ করছে সেটা তাদের ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে আমরা কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেইনি।

মশার প্রকার : মশা প্রধানত তিন প্রকার; অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স ও স্টেগোমিয়া। মশাকে সম্মান করে ‘মিয়া’ যোগ করে স্টেগোমিয়া বলা হয় না। এটা তার নামের অংশ। প্রথম প্রকার মশা ম্যালেরিয়া, দ্বিতীয় প্রকার মশা গোদ বা ফাইলেরিয়া রোগের জীবাণুবাহক। আর এডিস মশা ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। বিশেষ করে ২০০০ সাল থেকে এই ব্যাধিটি বাংলাদেশে আতঙ্কের একটা বড় কারণ। ডেঙ্গুর ব্যাপারে সতর্ক হয়ে এডিস মশার প্রজননস্থল প্রতিরোধে কিছুটা সজাগ হলেও সে তুলনায় অন্যান্য মশার বংশবৃদ্ধির ব্যাপারে সচেতনতা খুবই কম দুই সিটি কর্পোরেশনের। এ কারণেই মশার প্রজননস্থলের অভাব নেই এই রাজধানীতে , অভিযোগ নগরবিদদের।

 ডেঙ্গু রোগ ২০০০ সালের দিকে আতঙ্ক সৃষ্টির পর কয়েক বছর এটা ছিল কম। সম্প্রতি আবার অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন এডিস মশাঘটিত এই জ্বরে। সেই ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের অন্যতম দায়িত্বশীল ও পেশাজীবী আন্দোলনের একজন নেতা ইব্রাহিম মিয়ার মৃত্যু ঘটেছিল। এরপর ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের একমাত্র ছেলে। এই দুটি মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছেই ।

কুইনিন সারাবে কে? 

নগরবাসী তেমন ভরসা রাখতে পারেন না যে, করপোরেশনের তৎপরতায় মশার দৌরাত্ম্য দূর হবে। তাই দেখা যায়, এর জ্বালা থেকে রেহাই পেতে কেউ মশারি কিনছেন, কেউ বিদ্যুতায়িত র‌্যাকেট কিনছেন, আবার কেউ কয়েল কিংবা স্প্রে কেনায় ব্যস্ত। হয়তো মশা ঠেকাতে বিশেষ ধরনের বডি লোশনও ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘ম্যাজিক’ মশারি আর ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ কয়েলের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। ম্যাজিক মশারি নাকি জাদুর মতো স্পর্শ দিয়েই মশাকে কাবু করে ফেলে। আর খাঁটি কয়েলের কাজ নাকি মশা মারা নয়, তাড়ানো। এটা বুঝতে পারলে মশারা খুশি হয়ে কামনা করত, যেন সবাই ‘বিশুদ্ধ’ কয়েল ব্যবহার করে। 

নগরবিদদের মতে , এখন করণীয় হলো- মশা দমনের পৌর অভিযান নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি। যেমন- যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে তার গুণগত মান সম্পর্কে প্রথমেই নিঃসন্দেহ হতে হবে। এরপর দেখতে হবে, পরিমাণ যথার্থ কি না। যথাসময়ে যথযথভাবে ওষুধ দেয়া হচ্ছে কি না, তার পর্যাপ্ত তদারকি এবং দায়িত্বে অবহেলার প্রতিবিধান থাকা ।

মশার ওষুধ, সংশ্লিষ্ট সাজসরঞ্জাম-যন্ত্রপাতি এবং লোকবল প্রয়োজনমাফিক মজুদ রাখা অপরিহার্য। আর বিশেষ করে মশার যত উৎসস্থল আছে; ডোবানালা, ড্রেন নর্দমাসহ সব জায়গায় ওষুধ দেয়া ছাড়াও নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় অজস্র মশার প্রজনন থাকবে অব্যাহত। এ কার্যক্রমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও শামিল করতে হবে। অনেকে ক্ষোভে দুঃখে বলে থাকেন, কয়েল ও মশারি ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর অসৎ কর্মকর্তারা মশা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নেন না। আরো শোনা যায়, ‘মশা যদি নির্মূল হয়ে যায়, তাহলে এর দমনের জন্য বার্ষিক যে মোটা বরাদ্দ, তা মিলবে না। যদি তা না পাওয়া যায়, তাহলে এই অর্থের ‘নয়ছয়’ করে দাঁওমারা যাবে কী করে?’ এসব অভিযোগ ওঠার মতো পরিস্থিতি যেন আর না থাকে, সে দিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া কর্তব্য বলে মনে করেন নগরবিদগন।

তাদের মতে , মশা মারা সিটি করপোরেশনের কাজ। তবে অনিয়ম-দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলার ধারা চললে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের মতো মশকনিধনও কার্যকরভাবে সম্ভব হবে না। তাই ‘কুইনিন ম্যালেরিয়া সারায়। কিন্তু কুইনিন সারাবে কে?’ এমনটা যেন না হয় বলে তাদের অভিমত ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ