রোহিঙ্গাদের ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ ছাড়ার নির্দেশ মিয়ানমারের মন্ত্রীর
১৩ ফেব্রুয়ারি, এএফপি/রয়টার্স : পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রায় ৬ হাজার মানুষ এখন রয়েছেন তমব্রু নামক অঞ্চলে। ওই অঞ্চলটি মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ড। সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ওই মন্ত্রীর এক ভিডিও বক্তব্যের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি আর ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স নিজস্ব অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে তুলে এনেছে নারকীয় হত্যাকা- ও নির্যাতনের ভয়াবহ বাস্তবতা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে হাজারো রোহিঙ্গা। তারা দু’দেশের মধ্যবর্তী নো-ম্যানস ল্যান্ড তমব্রুতে অবস্থান করছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, তমব্রুতে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। এদের উদ্দেশে মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সতর্কতা জারি করেছেন।
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় তেমন কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মনে করছে, রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বাস্তবতা তৈরি হয়নি এখনও। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষেরাও রাখাইনে ফিরতে চান না। বরং এখনও রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন তারা। বাংলাদেশে প্রবেশের আশায় তমব্রুতে অবস্থানকারী ৬ হাজার রোহিঙ্গার উদ্দেশে মেজর জেনারেল অং সো বলেন, তাদের উচিত মিয়ানমারে ফিরে আসার বিষয়ে সরকারে নির্দেশনা মেনে নেয়া। তিনি সতর্ক করে বলেন, তারা এখন যেখানে অবস্থান করছে তা মিয়ানমারের সীমানার মধ্যে। তারা মিয়ানমার সরকারের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করলে তা রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
এএফপি-কে তমব্রুতে মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিদর্শনের খবর নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী। ওই মন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশ পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি প্রচার করছিলেন মিয়ানমারের সীমানা থেকে সরে না গেলে শরণার্থীদের বিপদে পড়তে হবে।’ স্থানীয় বিজিবি কমান্ডার মঞ্জুরুল হাসান খান ওই ফরাসি বার্তা সংস্থাকে বলেন, রোহিঙ্গাদের তমব্রু ছেড়ে যেতে বাধ্য করতে শুক্রবার থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ উচ্চস্বরে প্রচারণা চালাচ্ছে। তমব্রুতে অবস্থানরত শরণার্থী দিল মোহাম্মদ এএফপিকে বলেন, মিয়ানমারের সেনারা প্রায়ই ফাঁকা গুলি ছুড়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। আমরা শুনেছি সম্প্রতি তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামেও আগুন দিয়েছে।