বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়া আকিফা বাঁচলো না

বাবার কোলে কুষ্টিয়ায় বাসের চাপায় আহত শিশু আকিফার লাশ! পাশে মায়ের আহাজারি। ছবিটি গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের সামনে থেকে তোলা -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়া জেলা শহরের চৌড়হাস এলাকায় যে দুর্ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে অনলাইনে, তা আবারও খবরের শিরোনোমে উঠে এসেছে। চোখের পলকে ঘটে যাওয়া হৃদয় বিদারক এক দুর্ঘটনা ধরা পড়ে ওই ভিডিও-তে, আর ঘটনাটি বিস্মিত ও আতঙ্কিত করেছে তাদের সবাইকে যারা এটি দেখেছেন। হৃদয় নাড়া দেয়া ওই ভিডিও-তে একটি বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়তে দেখা যায় একটি শিশুকে।

পরে সেই শিশুটিকে আর বাঁচানো যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবারই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছে আট মাসের শিশুটিকে। বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত শিশু আফিফা খাতুনকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা। গতকাল ভোররাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া। 

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, ফয়সাল গঞ্জেরাজ পরিবহণের ওই বাসের চালককে ধরতে পুলিশ ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। বাসটিকে সনাক্ত করা হলেও এর চালক খোকন পলাতক।  

গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আফিফাকে কোলে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড় এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিলেন তার মা রিনা খাতুন। এ সময় পেছন থেকে ফয়সাল গঞ্জেরাজ পরিবহণের ওই বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয় আফিফা। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আফিফাকে প্রথমে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে বুধবার তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে আফিফার মৃত্যু হয় বলে তার বাবা সবজি ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদ জানান।

এদিকে আফিফা ও তার মাকে বাসের ধাক্কার ঘটনাটি ধরা পড়েছে স্থানীয় একটি জুয়েলারির দোকানের সিসি ক্যামেরায়। সেই ভিডিওতে দেখা যায় রাজশাহী থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা গঞ্জেরাজ পরিবহণের বাসটি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলছিলেন চালক। অন্যান্য যানবাহন ওই বাসের পাশ কাটিয়ে সামনে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে রাস্তার উল্টো দিক থেকে শিশু কোলে আসা এক নারীকে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বাসের সামনে দিয়ে পার হতে দেখা যায়। ঠিক তখনই বাসটি চলতে শুরু করে এবং রিনা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। গতি কম থাকায় রিনা বেগম প্রাণে বেঁচে গেলেও তার কোল থেকে পড়ে যায় এক বছরের আফিফা। বাস চলে যাওয়ার পর আহত আফিফাকে কোলে তুলে নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন রিনা। আশপাশের লোকজনও তখন ছুটে আসেন। পরে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।

এদিকে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। ওই বাসের চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার চৌড়হাস মোড়ে মানববন্ধনও করেছেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় নাগরিকরা।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, “শিশুটির পরিবারের সবাই এখনও ঢাকায়। তারা ফিরলে আমরা মামলার প্রক্রিয়া শুরু করব।”

শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মশিউর রহমান জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে মারা যায় শিশুটি। আকিফার মরদেহের ময়নাতদন্ত করার পর সেটি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে তার মা এখনো চিকিৎসাধীন।

শিশুটির চাচা আবু বকর সিদ্দিক জানান, তাদের কুষ্টিয়া সদর চৌরহাস এলাকায় আকিফাদের বাড়ি। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আকিফা ছিল ছোট। বাবা হারুন অর রশিদ সবজি বিক্রেতা। গত মঙ্গলবার রিনা তার মেয়ে আকিফাকে কোলে নিয়ে পোড়াদহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাস্তা পর হচ্ছিলেন। এ সময় রাজশাহী থেকে ফরিদপুরগামী একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪-০১৭৭) চৌড়হাস মোড় এলাকায় যাত্রী ওঠানোর  জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। বাসের সামনে দিয়ে রিনা যখন রাস্তা পার হচ্ছিলেন তখন কোনো হর্ন না বাজিয়েই বাসটি চলতে শুরু করে। বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে আকিফা। পরে বাসটি দ্রুত চলে যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ