কবিতা
শরৎ
তমসুর হোসেন
শরতের দিনগুলো টুনটুনির চঞ্চল পাখার আন্দোলনে নাচে
কাঁঠালের সবুজ পাতায় দুপুরের শাণিত রোদের ঝলকানি
মনকে টানে অরণ্যের নিরালায়
যেখানে শান্ত গেছোবাঘ নির্বিঘেœ ঘুমোয় বৃক্ষের ডালে।
বুকের এ্যালবামে সজ্জিত করে রাখি প্রতিটি হিরন্ময় দিন
ঝকমকে গাঁয়ের ছবি কোমল হাওয়ায় ওড়ে মেঘের সান্নিধ্য চায়
মনে হয় সব নদী শহর বন্দর জলাশয়
পবনের ঘোড়ায় চড়ে চলে যাবে অন্য কোন দেশে।
শরতের অনুপম নিসর্গে স্বর্গীয় হুরের কঙ্কণের শব্দ
শেষরাতে আগাম শীতের পাতাচোয়া শব্দকে টেনে আনে
পুকুরের স্বচ্ছ পানি আকাশকে দোলায় বুকের তরঙ্গে
আমার মনে তখন বর্ণিল ভাবনারা ছুটে আসে।
জঙ্গলে মউ মউ গন্ধ করে বনভাদুরীর সতেজ পাতা
কৃষ্ণকাজল বিঢপীরা পল্লবের ছাতায় পথিকের দেহে ঢালে মায়া
নির্জন বালুচরে অস্থির তরঙ্গে কাঁপে তীর
এই দেশ অতিথি পাখিদের ডাইরিতে স্বপ্নময় বিচিত্র আশ্রম।
ঘণ্টা বাজে শব্দহীন
মুহাম্মদ রেজাউল করিম
ফাঁকা মাঠ
দূর পথে কলরোল
এইখানে দাঁড়িয়ে পথিক বিকেলের।
বিষন্ন প্রহর
ধুক্্ ধুক্্ বুক
ঘুর ঘুর করে কোন সে কালো ছায়া।
ধুমায়িত আকাশ
কন কন বাতাস
পথে পথে উধাও নিঃশ্বাস
ব্যস্ত রাত্রি ঘরে আর ঘরে
ডাকে ঘুম নির্ঘুম
কাঁপে ঠোঁট পথিকের
সামনে দাঁড়ায় স্বচ্ছ আয়নার
ঘণ্টা এক বেজে উঠে শব্দহীন॥
অহংকারের প্রাসাদ
শাহিদ উল ইসলাম
নিজেকে হিমালয় ভেবে ভেবে একদিন দেখবে
তোমার চূড়ায় আর বরফ জমছে না!
তোমার দেহে আঁটসাঁট লেগে থাকা পাথরগুলো
আলগা হয়ে একদিন মিশে যাবে ধরার ধুলোয়।
কেউ ভুলেও বলবে না এখানে হিমালয় ছিলো
কোন পাখি আর গাইবে না তোমার গান!
তবে কেনো অহংকারের প্রাসাদ গড়তে গড়তে
আকাশ ছুঁয়ে বহুতল ভবন হতে চাও!
মনে রেখো অহংকার তোমার পতন কারণ
এখনো সময় আছে মাটি মেখে মাটি হও।
তোমার চারপাশে মোসাহেবের যে আঁটি বাঁধা
মৌসুমি মাছির ঝাঁক
পা চাটা এসকল কুকুরের দল
কালে দেখবে তারা সরে গেছে দুগ্ধবতী অন্য উলানে।
এবং তোমাকে আকাশে তুলে দেবার কথা
বলে ওরা মই সরিয়ে নিলে
ফের আবার সেইসব মীরমদনের অট্টহাসি!
সেদিন বন্ধু তুমি করো স্মরণ
ফের আবার কথা হবে দুজনার।
শেষকথা;
ভালোবাসি বলে যদিও তুমি
বুকচিরে হৃদপি- নিয়ে
বারংবার হিন্দ বিনতে উতবা হয়ে যাও!
মরু খা খা বুকে যে ক্ষত এঁকে যাও তুমি
সে ঘা হয়তো কালে শুকাবে না কোনদিন
তবুও তুমি আছো আমার হৃদ আঙিনায়
প্রভাতে সদ্য ফোটা গোলাপ।
প্রেম তুমি
শাহীন আরা আনওয়ারী
হোলনা পূর্ণ তবু
পুরোটাই চাই
ছিল লু হাওয়ার দোল
ছিলনা মাধবী সকাল
দহনে জ্বলেছি তবুও
বাতায়নে আমি
কেদেছি গহীনে আর
দূরে ছিলে তুমি
কখোনো আবার যদি
করো এই ভুল
খুলবো না হৃদয় কুসুম
শুকাবে বকুল।
কি হবে জীবন যদি
এমনই প্রদীপ
আগুনের তাপ হও
বুনে দাও অতীত
হোল না সন্ধ্যা তবু
নিভে গেলো আলো
কান্নার পর্দায়
রাত নেমে এলো
তাহলে কি প্রেম নেই
শুধু যত কথা
ভুল কিনা শুদ্ধ
নীল প্রেম বার্তা।
আশা-প্রত্যাশা
ওয়াহিদ আল হাসান
ভিতর বাইরে বিদ্যমান অসঙ্গতি ভুল
ধরে ধরে জীবন থেকে মুছে ফেলে
জ্ঞানেগুণে অবারিত ডানা মেলে
গড়ে তুলি এক জীবনধারা যার নেই তুল।
জীবন পথের কথাগুলো সুরে সুরে
বাজে যেনো আপন মনে সারাবেলা
দুখের বীণা দূরে ঠেলে করে খেলা
সুখের সূর্য উঠুক ঘরে ঘুরে ঘুরে।
চাঁদের মতো মনোমুগ্ধ আলো দিয়ে
জীবননদী ভরে দাও টলমল করে
দুর্গতি ধুয়ে মুছে মনটাকে ভরে
পরিপাটি করে রেখো মধু পিয়ে।
সময় নহর
মোহাম্মদ এনামুল হক
ভোরের ট্রেনটা চলে গেছে বহুদূর
সময়টা গড়িয়েছে নীরবে প্রচুর।
জীবনের পেন্ডুলাম দুলছে দোদুল
পান্ডুর বিকেলে ঝরে বিমর্ষ বকুল।
সময়ের মোম গলে ক্ষয়ে যায় চাঁদ
কান পেতে শোন অই প্রলয় নিনাদ।
কুহুকের পিছে কাটে সোনালি প্রহর
অবিশ্রান্ত বয়ে যায় সময় নহর।