বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

ইভিএম পদ্ধতিতে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে সরকারি ও বিরোধী দল

খুলনা অফিস : খুলনার-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসন ইভিএম পদ্ধতির আওতায় পড়েছে। এখানকার ১৫৭টি কেন্দ্রে এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত হতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ইভিএম প্রদর্শন করা হচ্ছে। সরকারি ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারপরও বিশ্বাস-অবিশ্বাস দু’ পক্ষের মধ্যে। কেসিসি নির্বাচনে দু’টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইভিএম পদ্ধতির বিরোধীতা করে। বিএনপি খুলনা মহানগরীতে এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিতে দু’দফা সমাবেশ করে। নির্বাচন কমিশন খুলনা-২ আসনকে ইভিএম পদ্ধতির আওতায় আনার পর বিএনপি ইতিবাচক দৃষ্টিতে নেয়। সরকারি দলের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে এ সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলা হয়েছে। সরকারি শিবিরেও এ নিয়ে অবিশ্বাস রয়েছে।
কেসিসি নির্বাচনে ভোট কারচুপির পর খুলনায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। পাড়া মহল্লায় প্রার্থীদের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কাস্তে প্রতীকের প্রার্থীর পোস্টার দেখা যায়নি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থীর পোস্টার স্বল্প সংখ্যক। গত তিন দিনের বৈরি আবহাওয়ায় বেশির ভাগ পোস্টার ছিঁড়ে পড়েছে। এবারের নির্বাচনে স্থানীয় ভোটারদের আগ্রহ খুবই কম।
খুলনা সদর থানা ও সোনাডাঙ্গা নিয়ে খুলনা-২ আসন। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭১৪ পুরুষ এবং ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৫ মহিলা। ১৫৭টি কেন্দ্রের ৬৫৩টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এ আসনের প্রার্থীরা হচ্ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মহাজোটের সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টির একেএম ইদ্রিস আলী, বাম গণতান্ত্রিক জোটের এইচএম শাহাদাত, গণফ্রন্টের মনিরা বেগম ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির এসএম সোহাগ।
খুলনা-২ আসনটি মুসলীম লীগ অধ্যুষিত এলাকা। ১৯৮১ সালে মুসলীগ লীগ প্রধান খান-এ সবুরের মৃত্যুর পর তার আদর্শের সমর্থকরা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেই থেকে এখানে বিএনপির পাল্লা ভারি হয়। এ আসনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ায় বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে খুলনা-২ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন।
নির্বাচন কমিশনের রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মরহুম শেখ আব্দুস সালামের প্রাপ্ত ভোট ১৪ হাজার ৯৮। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম নূরুল ইসলাম ১১ হাজার ৭১৭ ভোট পান। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে খান-এ সবুর নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ ও ’৮৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ রাজ্জাক আলী ৪১ হাজার ৫৯০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মরহুম এডভোকেট মঞ্জুরুল ইমামের প্রাপ্ত ভোট ২৮ হাজার ২৬৬। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শেখ রাজ্জাক আলী ৫৬ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মরহুম এডভোকেট মঞ্জুরুল ইমামের প্রাপ্ত ভোট ৫৪ হাজার ৭৭৮। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ৯১ হাজার ৮১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মরহুম এডভোকেট মঞ্জুরুল ইমামের প্রাপ্ত ভোট ৬২ হাজার ২১। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু ৯০ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মিজানুর রহমান মিজানের প্রাপ্ত ভোট ৮৯ হাজার ২৮০। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মুুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে উভয় পক্ষই নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত, গ্রীন ও ক্লিন সিটি, মাদক, সন্ত্রাস ও ভূমিদস্যু মুক্ত খুলনা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, এবার ধানের শিষে ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি কারাবন্দী সাবেক প্রধানমমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে গ্রীন ও ক্লিন সিটি গড়ে তোলা হবে। ভোট ডাকাতদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তাদের অশুভ তৎপরতাকে প্রতিহত করতে হবে। তিনি গণতান্ত্রিক এ আন্দোলনে খুলনাবাসীকে সক্রিয় ভূমিকা পালনেরও আহবান জানান।
মহাজোট মনোনীত প্রার্থী সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বলেন, নির্বাচিত হলে খুলনাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সেজন্যে সমাজের সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করে শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করে তরুণ ও নারী সমাজের কর্মসংস্থান করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ