বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

জ্ঞান অন্বেষণে বই বিতরণ উৎসবের কোনও বিকল্প নেই

নজরুল ইসলাম তোফা : বই হলো জ্ঞান অর্জনের ১ম মাধ্যম। বই উৎসবটিই হচ্ছে 'আলোর উৎসব'। নতুন বছরের শুরুতে বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ের নতুন সূর্য দেখেছে। কোমলমতী শিশু, কিশোররা অন্তহীন আনন্দের মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জনের এমন এ উৎসব আগামী দিনের স্বপ্ন দেখতে প্রস্তুত হচ্ছে। সুনগারিক গড়ে তুলতে শিশু কিশোরসহ এই দেশের জনগণের হাতে বই তুলে দেওয়া প্রয়োজন। আসলেই বইয়ের মাধ্যমে নানা ভাবনার সংমিশ্রণে ব্যক্তিগত ধারনা ও বিশ্বাস দৃঢ় হয়। যে সকল নাগরিক নিজস্ব সু-চিন্তিত মতবাদের ওপর আস্থাবান তারাই গণতন্ত্রের সম্পদ। আর এমন রকম নাগরিক পেতে হলেই দেশের শিশু থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী, পেশার মানুষের হাতে বই তুলে দেয়ার বিকল্প নেই। সারাবিশ্বের মনীষীদের বইয়ের নেশার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে মানব জীবনকে এক দৃষ্টান্তমূলক উক্তি দিয়েছিলেন টলস্টয়। সেটি ঠিক এমন, ”জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই, বই, এবং বই।” জ্ঞান অর্জনের প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে বই।
তাই মানব জীবনযাত্রাকে সফলতার আলোকে আলোকিত করবার প্রধান উপায় হচ্ছে বই। সুতরাং ভালো বই পড়েই জ্ঞান অর্জন করে যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়েই সমাজ বা রাষ্ট্রের অনেক পরিবর্তনের চিন্তা করা বাঞ্ছনীয়।
বাংলা সাহিত্যে 'বই পড়া' আর 'বই কেনা' নিয়ে দুটি বিখ্যাত প্রবন্ধ আছে। শিক্ষিত লোকদের এই প্রবন্ধ দুটির সঙ্গে অল্পবিস্তর পরিচয় আছে। প্রথম ভারিক্কি প্রবন্ধটি প্রমথ চৌধুরীর। আবার দ্বিতীয়টি রূপ-রস-গন্ধে ভরা রম্যলেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর। প্রমথ চৌধুরীর বই না পড়ার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছে। তারপর তিনি এও দেখিয়েছে অর্থকরী নয় এমন সব কিছুই এই দেশে অনর্থক বলে বিবেচনায় নিয়েছিল। ঠিক তখন থেকে লোকজনের বই পড়ার প্রতি অনেক অনীহা। "প্রমথ চৌধুরী" ব্রিটিশ আমলে বলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে লব্ধ জ্ঞান পূর্ণাঙ্গ নয়। পক্ষান্তরে যদি দেখি একবার বিদ্যাসাগরের বই চুরি গেল, দুষ্প্রাপ্য- "সংস্কৃত বই"। যিনি নিয়েছিল- তিনি ফেরত দেননি এবং সে কথা আর স্বীকারও করেনি। বিদ্যাসাগর পড়েছিল মুসকিলে। বন্ধু জনকেই কিছু বলতে পারেনি। তাঁর বন্ধু সেই বই বইওয়ালার কাছে বিক্রি করেছে। তাই বই বা পুস্তক নিয়েও ভালো মন্দ অনেক কথাই রয়েছে। কিন্তু আবার যদি 'বই' পড়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করি তা হলে, 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর' ও 'মদনমোহন তর্কালঙ্কার'র কথা চলে আসে। যৌথভবে তাঁরা একটি বইয়ের দোকান দিয়েছিল। সেখানে বই বিক্রি করে লাভ করতে না পারলেও তাঁরা সবাইকে বই পড়ায় আগ্রহী করে তুলেছিল। সুতরাং, বলতে হয় যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহু অভিজ্ঞতার আলোকেই সকল জনগণকে বই প্রেমী করে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সারা দেশের "কোমলমতি শিক্ষার্থীরা"- ২০১৯ সালে অর্থাৎ বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই হাতে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। নতুন বইয়ের মৌ মৌ গন্ধে শিশুরা আনন্দিত, মাতোয়ারা। আবার শিক্ষামন্ত্রীও বলেছে, দেশ ও পৃথিবীকেই 'বই কিংবা সংবাদপত্র' আমাদের ঘরের মধ্যেই এনে দিয়েছে। 'বই বা পত্রিকার' প্রচার না ঘটলে জাতীয়তাবোধ ও আন্তর্জাতিক ভাবনায় কোন ধরনের বিকাশ ঘটত কিনা সন্দেহ। জননেত্রী শেখ হাসিনা'র সরকার গ্রন্থ প্রকাশনা সহজ করবার জন্য একটি জাতীয় গ্রন্থনীতি প্রণয়ন করেছে। তাই, জ্ঞান অন্বেষনে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং, সারা বিশ্বের বরেণ্য মনীষীর জীবন ইতিহাস ঘাঁটলে অনেক কথার সত্যতা চোখে পড়বে। বইয়ের পাতায় পাতায় ডুবে দিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ইবনে সিনা, আল রাযী, ইবনে রুশদ, যুবরাজ ফাতিক, মাদাম মেরি কুরিসহ বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ এবং ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতো বহুসংখ্যক জ্ঞান পিপাসুরাই 'বই পাঠে' ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সবার জ্ঞাতার্থের আলোকে মহৎ জীবনের আলোকে আজও তেমনিভাবেই বই পড়ুয়া অসংখ্য ব্যক্তির সৃষ্টি হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে।
নতুন প্রজন্মকেই আগামী দিনের "উন্নত বাংলাদেশ" গড়ায় বড় ভূমিকা পালন করবে এই 'বই'। আধুনিক এবং উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত একটি জাতি গঠনে এই সরকার "বই বিতরণের উদ্যোগ" বাস্তবায়ন করেছে। এক সময় "পুস্তক অথবা শিক্ষা" সরঞ্জামের অভাবে কোমলমতী শিশুরা যেন স্কুলে যেত না প্রতি বছরেই অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ত। এখন সেই ঝরে পড়ার হার নেই বললেই চলে। টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বছরের ১ম দিনেই গত দশ বছরের মত ছাত্র/ছাত্রীরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে।
তাছাড়া শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির পাশাপাশি নতুন নতুন স্কুলের ভবন পাচ্ছে ও হচ্ছে। বই নিয়েই যে হবে এমন নয়, পরিবেশের সহিত তাদের আর্থিক সচ্ছলতার প্রয়োজন আছে। তাই শিক্ষার উন্নয়নসহ দেশের চলমান উন্নয়ন অব্যাহত থাকাই বাঞ্ছনীয়।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার সেই ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর যেন বছরের ১ম দিনে বিনামূল্যে বই বিতরণের উৎসব করে আসছে। 'বই বা পুস্তক' লেখা আর পাঠকের হাতে তা পৌঁছানোর জোর তাগিদও দিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই বছর চার কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে- ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২টি বই। আর ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
আবার কিছু কিছু বিতর্কিত কথাও উঠে এসেছে তা হলো, পুস্তক ছাপানো নিয়ে বিতর্ক। এ বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছে। তিনি বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটাকে অসম্ভব মনে করলেও এমন দেশে তা সম্ভব হয়েছে। বছরের প্রথম দিনেই "বই" তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এখন আর বই সংগ্রহ করতে বছরের অর্ধেক সময়ে চলে যায় না। প্রধানমন্ত্রী 'শেখ হাসিনা' বলেন, বিগত দিনের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেই নতুন এই সরকার এই খাতকে আরও অগ্রাধিকার ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। আগামী বছরগুলোতেও উৎসবমুখর ভাবেই 'জাতীয় বই বিতরণের ধারাবাহিকতা' বজায় রাখবে। "বই" উৎসবে শিক্ষার্থীদের কাছে এবার মূল প্রতিপাদ্য হলো- বই পড়া, বই ছাপানো এবং বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করাসহ ইত্যাদি বিষয়েও সকল শিক্ষার্থী এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথেই যেন-এই "বই বিতরণ উৎসব" পালিত হোক। "বই হোক নিত্যসঙ্গী"।
লেখক: টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ