বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

কুষ্টিয়া চিনিকলে আখ সরবরাহ করে পাওনা টাকা পাচ্ছেন না শতশত কৃষক

 

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : গত দুই বছরের তুলনায় এবার কুষ্টিয়া চিনিকল জোনে আখ উৎপাদন বাড়লেও ভাল নেই কৃষকরা। চিনিকলে আখ সরবরাহ করে পাওনা টাকা পাচ্ছেন না শতশত কৃষক। এতে মারাত্মক সংকট ও হতাশায় পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে আখ চাষে অনীহা দেখা দিচ্ছে। জানা যায়, আখের কম মূল্য, চিনিকলে আখ বিক্রিতে হয়রানী এবং বিক্রির পর টাকা পেতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিগত মাড়াই মওসুমগুলোতে এখানে আখ চাষ মারাত্মকভাবে কমে যায়। পরে চিকিকল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে ফের চলতি মওসুমে আখ চাষে ব্যাপক সাড়া দেন কৃষকরা। চলতি মাড়াই মৌসুমে সাড়ে ১২ হাজার একর জমিতে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কুষ্টিয়া সুগার মিল। সেই হিসাব মতে বিগত দুই বছরের তুলনায় মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারি থেকে শুরু করে কৃষকরা এবার বাড়তি জমিতে আখ আবাদ করে, ফলনও ভাল হয়। তবে আখ আবাদ করে বিপাকে কৃষকরা। মিল গেটে আখ সরবরাহ করে টাকা পাচ্ছেন না তারা। ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া পড়ে আছে হাজারো কৃষকের। এ নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভের অন্ত নেই তাদের মাঝে। এদিকে আখ বিক্রি করে টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকদের অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না কৃষকরা। অনেকের জমিতে আখ নষ্ট হচ্ছে। সদর উপজেলার কবরবাড়ীয়া গ্রামের আখচাষি আলম হোসেন বলেন, তিনি এ মৌসুমে ১০ একর জমিতে আখ চাষ করেছিলেন। ইতিমধ্যে ৮ একর জমির আখ কেটে কুষ্টিয়া চিনিকলে বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখনও চিনিকল কর্তৃপক্ষ একটি টাকাও পরিশোধ করেনি। চিনিকলের কাছে তার পাওয়ানা প্রায় দেড় লাখ টাকা। জুগিয়া এলাকার আখ চাষি বজলুর রহমানের পাওনা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘জমানো টাকা দিয়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করেছি। এখন টাকার অভাবে ছেলের স্কুলের বেতন দিতে পারছি না।’ ঝালুপাড়া এলাকার চাষি সাহাবুর রহমান বলেন, মিলের কাছে তার পাওনা ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আগামী বছর আর আখ চাষ করবেন না তিনি।

আখ চাষি কল্যাণ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক মো. মনিরুজ্বামান বলেন, কৃষকরা এভাবে হয়রানী হলে আগামী মাড়াই মওসুমে কুষ্টিয়া জোনে আখ চাষে বিপর্যয় নেমে আসবে। কেউ আখ চাষ করবে না। বরং অন্য ফসল করলে লাভ। কৃষক নগদ টাকা পাবে। কৃষকের স্বার্থ কেউ দেখছে না। এতে সবাই হতাশ। কর্পোরেশনের কথার সাথে কাজের কোনো মিল নেই।’ কুষ্টিয়া চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার মোরশেদ বলেন, মিলের কাছে চাষিদের পাওনা প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এ অর্থ চাষিরা কবে নাগাদ পাবেন তার কোন দিনক্ষন বলা সম্ভব নয়। কারণ, এটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। উৎপাদিত চিনি বিক্রি করে সব খরচা মেটাতে হয়। আর বাকি টাকার জোগান দেয় সরকার। তাই চিনি বিক্রি এবং সরকারি অর্থের জোগান না আসা পর্যন্ত চাষিদের পাওনা পরিশোধ সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আখ ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা ও চিনি উৎপাদনের বড় প্রভাব বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ