বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

প্রসঙ্গ কুরবানির পশু মোটাতাজাকরণ

মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা সমাগত। মুসলিমজাহানের অন্যসব দেশের মতো বাংলাদেশের সামর্থবানরাও পশু কুরবানি করেন। এটা তাদের জন্য জরুরি। তাই তারা গরু, ছাগল, ভেড়া কুরবানি করেন। উল্লেখ্য, এ উপলক্ষে এখানে লাখ লাখ পশু কুরবানি হয়। সুযোগসন্ধানি পশুব্যবসায়ীদের অনেকে স্টেরয়েড বা হরমোন জাতীয়া ওষুধ খাইয়ে কুরবানির পশু দ্রুত মোটাতাজা করেন বলে কয়েক বছর থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। উল্লেখ্য, পশুকে হরমোন খাওয়ানো মারাত্মক ক্ষতিকর এবং বেআইনি। হরমোন খাওয়ানো পশুর গোশত মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে এতে পশুর জীবন যেমন বিপন্ন হতে পারে; তেমনই এসব পশুর গোশত খেয়ে হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়তে পারেন মানুষও। পশুব্যবসায়ী ও খামারিদের সতর্ক করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদফতর গরু হৃষ্ট-পুষ্টকরণ সম্পর্কিত সতর্কীকরণ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রতিবার। টিভি চ্যানেলগুলোতেও এটি সম্প্রচারিত হয়। কিন্তু এবার তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তাহলে পশুব্যবসায়ী বা খামারিরা কি সাধু হয়ে গেলেন এক বছরে? আসলে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা পশুকে ধুমসে স্টেরয়েড বা হরমোন খাওয়াচ্ছেন। এতে পশু দ্রুত যেমন গায়েগতরে বড় হচ্ছে, তেমনই হৃষ্ট-পুষ্ট ও চকচকে দেখাচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে নিষিদ্ধ ওষুধ খাওয়াতে পশুর দেহে পানি জমে। কিডনি, লিভার নষ্ট হয়। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু অনেক সময় মারাও যায়। তাই খামারিরা কুরবানির পশুকে হাটে ওঠাবার দুতিন মাস আগে থেকে মাত্রাতিরিক্ত এসব রাসায়নিক খাওয়াতে শুরু করেন।
উল্লেখ্য, পশুকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ওষুধ খাওয়ানোর নিয়ম আছে। সেমতে খাওয়ালে অসুবিধে হবার কথা নয়। কিন্তু কা-জ্ঞানহীন খামারিরা যেমন গবাদি পশুকে ওষুধ খাওয়ানোর নিয়মকানুন জানেন না, তেমনই তাঁরা কেবল মোটাতাজা করে অধিক মুনাফা কীভাবে হবে সেটাই ভাবেন। পশুর গোশত খাওয়ার উপযুক্ত অথবা স্বাস্থ্যকর থাকলো কিনা সেদিকে কারুর খেয়াল নেই। গতবছরও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খামার পর্যায়ে এবং হাটে পশুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও তদারকির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের টিম সক্রিয় থাকবে। ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে পশু হৃষ্ট-পুষ্টকরণের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মৎস্য ও পশুখাদ্য আইন-২০১০ এবং পশুখাদ্য বিধিমালা-২০১৩ মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। এবার সেরকম কোনও ব্যবস্থা নেই বলে মনে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে খামারিরা কুরবানির পশুকে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড বা হরমোন খাওয়ানো অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এবারও।
যা হোক, কুরবানির পশু যাতে নিজে সুস্থ ও স্বাস্থ্যসম্মত থাকে এবং গোশত যাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর না হয় তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা দরকার। অধিক মুনাফালোভীরা যেন পশুকে অবৈধ ওষুধ বা হরমোন সেবন করাতে না পারেন সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীকেও সজাগ থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আরেকটি বিষয় কুরবানিদাতাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, পশু যদি সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান না হয় তাহলে কুরবানির বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাই তাদের পশু কিনতেও হবে যাচাই করে এবং দেখেশুনে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ