বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪
Online Edition

শিক্ষকদের আন্দোলনে উত্তাল রাজপথ

স্টাফ রিপোর্টার: সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবিতে ফের মাঠে নেমেছেন ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। অসংগতিপূর্ণ কালো এমপিও নীতিমালা বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনে উত্তাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাজপথ। এমপিও নীতিমালা সংশোধনের দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত দু’দিন ধরে শিক্ষক-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এদিকে নতুন এমপিও নীতিমালা অনুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করা তালিকা অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ তালিকা বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জাভেদ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো চলা কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে তারা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি জানান। দাবি আদায়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাতে বসে বিক্ষোভ করছেন। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত শিক্ষক নেতারা তাদের দুঃখ ও হতাশার বিষয়গুলো তুলে ধরে আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তুলছেন। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেতন-ভাতা ছাড়া চাকরি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন -বক্তব্যের মাধ্যমে এসব বিষয় তারা সকলের কাছে তুলে ধরছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, এমপিওভুক্তি নীতিমালা ২০১৮-তে বৈষম্য ও অসঙ্গতি রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুনভাবে এমপিওভুক্তি করার জন্য বেশকিছু প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, এটি আমরা মানি না। বৈষম্য আর অসঙ্গতিপূর্ণ নীতিমালার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করায় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অনেক যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা ৩২ বারের মতো প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনে জড়ো হয়েছি।
আন্দোলনকারীরা  বলেছেন, এমপিও নীতিমালা-২০১৮ পরিশিষ্ট ‘খ’ এ নিম্ন-মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ-৮ম) শ্রেণি পর্যন্ত ১৫০ জন শিক্ষার্থী চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘খ’ তে নিম্ন-মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও ফলাফল চাওয়া হয়নি। এ স্তরে কোন মানদণ্ডে এমপিও করা হবে বিষয়টি আমদের কাছে স্পষ্ট নয়। পরিশিষ্ট ‘ক’ তে মাধ্যমিক পর্যায়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০০ জন এবং মফস্বলে ২০০ জন আবার বালিকা বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শহরে ২০০ জন, সফস্বলে ১০০ জন চাওয়া হয়েছে। উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্য পরীক্ষার্থী চাওয়া হয়েছে ৪০ জন, ২০০ জনে ৪০ জন পরীক্ষার্থী হলে ১৫০ জনে ২৬ জন হওয়ার কথা থাকলেও উভয়ক্ষেত্রে ৪০ জন চাওয়া হয়েছে। ‘নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১২০ জনের মধ্যে চাওয়া হয়েছে ৪০ জন, আবার ১৫০ জনের মধ্যেও ৪০ জন চাওয়া হয়েছে। স্নাতক পর্যায়েও এমন জটিলতা তৈরি করা হয়েছে। তারা বলেন, ভুলে ভরা ও নানা অসংগতিপূর্ণ এমপিওভুক্তির (বেতনের সরকারি অংশ) নীতিমালা অনুসরণ করে এমপিও তালিকা প্রকাশ হলে দেশের বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকার ব্যাপক জনসমালোচনার মুখে পড়বে, জন-অসন্তোষ তৈরি হবে।
নীতিমালা বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর প্রকাশিত এমপিওপ্রাপ্ত থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব বিষয় তুলে ধরতে চাই।
ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও ভুলে ভরা ও অসঙ্গতিপূর্ণ নীতিমালা তৈরি করে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে। গত ৫ থেকে ১৮ বছর আগের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, সরকারের আর্থিক সঙ্কটের কারণে তৎকালীন এসব প্রতিষ্ঠান বাদ দেয়া হলেও নতুন করে এমপিওভুক্তি বাবদ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সে অর্থ ফেরত দেয়া হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি, অথচ আমাদের যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তি তালিকা করা হয়নি। বিষয়টি আমরা একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি, সেসব ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে বলা হয়। সকল অসঙ্গতিগুলো আমরা ধরিয়ে দেই, সেসব সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা না করে এপিওভুক্তির নতুন তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিক্ষকদের কান্না প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারেন, তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব সমস্যা তুলে ধরতে চাই।
সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ঢাকায় আসছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। আরও অনেকে আন্দোলনে যোগ দিতে রওনা দিয়েছেন। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করতে বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল ১০টা থেকে আমরণ অনশন পালিত হবে।
এদিকে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তালিকা গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দেশে ফিরলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতির বয়স, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হার বিবেচনা করে এমপিওভুক্তির খসড়া তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জাভেদ আহমেদ জানান, গত সোমবার এমপিওভুক্তির তালিকা অনুমোদনের পর গতকাল সকালে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ও সচিব আসার পর এ সংক্রান্ত পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভারত গেছেন। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন গুরুত্বপূর্ণ কাজে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। মন্ত্রী ও সচিব দেশে ফেরার পর এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ