শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সন্ত্রাসবাদ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে

গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের উদ্যোগে ‘জঙ্গীবাদ, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সিয়ামের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা ও উলামা মাশায়েখ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ মসজিদ মিশন আয়োজিত ইমাম-উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম বলেছেন, সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও মাদকাসক্ত জনগোষ্ঠী আজ সমাজকে বিষাক্ত করে তুলছে। এদের কুপ্রভাবে খুন, জখম, ইভটিজিং, ধর্ষণ, মারামারি, হানাহানি আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে। একমাত্র ইসলামী বিধানই এসকল অনৈতিক কর্মকা- থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। তাই সন্ত্রাসবাদ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ইমাম-উলামা সম্মেলনে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম এইসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিতে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ, মাওলানা আতাউল্লাহ, আইম্মাহ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, পীর সাহেব মিরের সরাই মাওলানা আবদুল মোমেন নাসেরী, খেলাফতে রব্বানীর আমীর মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী পীর সাহেব টেকেরহাট, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা ফখরুদ্দীন আহমেদ, মাওলানা নাসির উদ্দীন হেলালী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম খান বরিশাল, ড. আবুল কালাম আযাদ বাশার, আইম্মাহ পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এনামুল হক, মাওলানা আব্দুল আল আমীন, কুরআন শিক্ষা ফাউন্ডেশন প্রধান মাওলানা ইমদাদুল হক, মাওলানা সোহাইল আহমেদ চিশতি চাদপুর, মাওলানা জামাল উদ্দীন, আলী আহমদ কাসেমী ইমাম রাজবাড়ী শাহী মসজিদ, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা আবু জাফর, মাওলানা যাকারিয়া, মাওলানা মোবারক হোসাইন, আবু বকর মুহাম্মাদ তাহের, মাওলানা মাসউদুর রহমান জিহাদী, ড. হাবিবুর রহমান, মাওলানা ফখরুদ্দীন আহমদ, মাওলানা মীম আতিকুল্লাহ, মাওলানা মারুফ বিল্লাহ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা জহিরুল ইসলাম জাবেরী, মাওলানা নাজমুল হাসান, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা ইশরাকুল ইসলাম হানীফ, মাওলানা আতিকুর রহমান নোমানী, মাওলানা আবদুল হাই মীরপুর প্রমুখ। সম্মেলনে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম, পীর মাশায়েখ, ইমাম খতীবসহ প্রায় এক হাজার উলামায়েকেরাম উপস্থিত ছিলেন।
বিচারপতি মো.আব্দুর রউফ বলেন, পবিত্র রমযান মাস আত্মশুদ্ধির ও কুরআন চর্চার মওসুম। পবিত্র কুরআনের কাছে সকল প্রশ্ন ও সমাস্যার সমাধান নির্ভূল ভাবে পাওয়া যায়। তাই আমাদেরকে সকল ভেদা-ভেদ ভুলে পবিত্র কুরআনের আলোকে জীবন গড়তে হবে। তাহলেই আদর্শ সমাজ গড়া সম্ভব। রমযানে তাকওয়া অর্জন করতে না পারলে আপনার আমার জীবন একেবারেই বৃথা।
মাওলানা আতাউল্লাহ বলেন, তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গঠন করার জন্য কুরআনী শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামুলক করতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইনে ইসলাম বিরোধী নীতিসমূহ বাতিল না করলে গোটা সমাজ ব্যবস্থা রসাতলে যাবে। তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গড়তে পবিত্র রমযান উপযুক্ত মওসুম। কিন্তু রমযান মাসে জুলুম, নির্যাতন ও অপরাধ প্রবণতা থেকে নিবৃত হতে না পারলে তাকওয়া অর্জন হবে না। তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাস ও মাদকতা দূর করতে হলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মাদকতা ও মদের লাইসেন্স চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
মসজিদ মিশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন বলেন, পবিত্র রমযান মাস আত্মশুদ্ধির ও কুরআন চর্চার মওসুম। পবিত্র কুরআনের আলোকে জীবন গড়লে সকল সমাস্যার সমাধান নির্ভূলভাবে পাওয়া যায়। তাই আমাদেরকে সকল ভেদা-ভেদ ভুলে পবিত্র কুরআনের আলোকে জীবন গড়তে হবে। তাহলেই সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদকমুক্ত আদর্শ সমাজ গড়া সম্ভব।
তিনি সালফে সালেহিনদের ঐক্যের নমুনা ও নজির তথা ইমাম আবু ইউসুফের সামনে ইমাম মালেকের ফতোয়া নিয়ে হানাফী খলিফার ইমামতির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে সকল স্তরের উলামা পীর মাশায়েখদেরকে একযোগে ঐক্যবব্ধভাবে কাজ করতে হবে। ছোটখাটো ইখতেলাফি বিষয়ে নিয়ে ফতোয়াবাজী বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কুরআনী সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। যুগে যুগে যারা সন্ত্রাস চালিয়ে তারা মুসলমান ছিল না।
মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, সমাজ থেকে সকল ধরনের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অপরাধ নির্মূল করতে ইমাম-খতীব ও সর্বস্তরের উলামায়ে কেরামকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে। যে ইমামের ইমামতিতে সালাত কায়েম হয় সে ইমামের ইমামতিতে অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। ইসলামের সুমহান দিক্ষা ও দিক-নির্দেশনা সমাজে সকল শ্রেণির মুসল্লির মাঝে ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে। সন্ত্রাসী, জঙ্গী এদের সাথে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। যারা ইসলামী জিহাদকে অপব্যাখ্যা করে সন্ত্রাস করতে চায় তারা মূলত ইসলামের দুশমনদের ক্রিড়ানক হিসাবে কাজ করতে তাদের এ ভয়াবহ কুকর্ম থেকে জাতিকে সতর্ক করতে হবে। অন্যাথায় তারা ইসলাম, দেশ ও জাতির মহাসর্বনাশ করে ছাড়বে। মহানবী (সা.) বলেন-একমাত্র মুসলমান সেই যার হাত ও জবান থেকে অন্য সকল মানুষ নিরাপদে থাকে। বুখারী ও মুসলিম।
মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী বলেন, তিনটি বৈধ বিষয় রোজার দিনে হারাম তা আমরা মানি কিন্তু যেগুলো সবসময়ে হামার সেগুলো থেকে কেন আমরা বিরত থাকছি না।
খেলাফতে রব্বানীর আমীর মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী বলেন, সন্ত্রাস বন্ধের কার্যকরী উদ্যোগ ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, কুরআন শিক্ষা সুন্নাহ অনুসরণ পবিত্র ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের শিক্ষাই রোজা আমাদের দিয়ে যাচ্ছে।
মাওলানা ফখরুদ্দীন আহমদ বলেন, সমাজে দুই ধরনের সন্ত্রাস চলছে, সন্ত্রাসী কর্তৃক সন্ত্রাস আর সন্ত্রাস নির্মূলের নামে জঘন্য রাষ্টীয় সন্ত্রাস।
মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী বলেন, আল্লাহকে ভয় করলে আল্লাহর অপছন্দনীয় বিষয় বর্জন করতে হবে।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের বসবাস। এখানে ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকতা নির্মূল করা সম্ভব। ইসলামী দল, সংস্থার দায়িত্বশীল, মসজিদের ইমাম ও খতীব, ইসলামী জালসা ও সেমিনারে আলোচকদের মাধ্যমে মাদকের দুনিয়াবী ক্ষতি ও পরিণতি এবং পরকালে এর শাস্তি ও ফলাফলের বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে বেশী ভূমিকা পালন করতে হবে। এর জন্য জাতীয় বাজেটে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টি এবং বিশ্বাস ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে যে পরিবর্তন আনা যায়, সেটাই হ’ল সর্বোৎকৃষ্ট ও স্থায়ী সংশোধন। আজকাল রেডিও, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকাতে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাদকের বিরুদ্ধে যে প্রচার চালানো হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। বরং যারা মাদক সেবন, মাদক পাচার ও ব্যবসার সাথে জড়িত, তাদের তালিকা ও চিত্র তুলে ধরা এবং তাদের থেকে সাধারণ মানুষকে সাবধান করা জরুরি। এছাড়া পিতা-মাতা ও মুরুববীরা ছেলে-মেয়েদের কাছে মাদকতার অপকারিতা তুলে ধরতে পারেন। কোন ছেলে এই ভয়াল নেশায় জড়িয়ে পড়লে সমাজের সচেতন সকলের এগিয়ে যাওয়া উচিত এবং তাকে ঐ নেশা থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করাও কর্তব্য।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ